বিশ্রাম মিলেছে। চাওয়ার পুরোটা না হলেও অন্তত সাউথ আফ্রিকা সফরের দুটো টেস্টে বিশ্রামে থাকা নিশ্চিত সাকিব আল হাসানের। তবে বছরের শেষভাগে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাকে পাওয়ার বিষয়টি থাকল অনেকটা ধোঁয়াশার মধ্যেই। যদি কিন্তু রেখে জানালেন- শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যদি খেলেনও, খেলবেন অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই।
মাসখানেকের বিশ্রাম পাওয়ার স্বস্তি নিয়ে মঙ্গলবার নিজ বাসায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাকিব। সেখানেই জানালেন বিশ্রামের পেছনের কারণ, তরতাজা হয়ে ফেরার পরিকল্পনা এবং নিজের ক্রিকেটীয় ভবিষ্যতের অনেক কিছুই। যা থেকে স্পষ্ট হল, সাউথ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলার কথা মাথাতেই আনছেন না সাকিব। যদিও বিসিবি তার ফেরার একটা পথ খোলা রেখেছিল ‘কেবল সাকিব চাইলেই’ জানিয়ে। কিন্তু সাকিব নিজে সেটা নিয়ে না ভেবে পাওয়া অবকাশটুকুতেই মনোযোগী।
‘আমি যদি দুই টেস্টের পরেও যাই, তাহলেও এক মাসের একটা ব্রেক কিন্তু হয়েই যায়। শেষ তিন-চার বছরে এই ব্রেকটা আমি পাইনি। সেদিক থেকে দেখলে আমার জন্য এটা বড় একটা ব্রেক।’
প্রথম টেস্টে বিশ্রামের পর দ্বিতীয় টেস্টে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ফিরবেন কিনা বা ফেরার কোনও বাধ্যবাধকতা আছে কিনা সে প্রশ্নে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বল সাকিবের কোর্টেই ঠেলে দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। একদিন পর সেই প্রশ্নে নিজের অবস্থানই যেন পরিষ্কার করলেন সাকিব।
সঙ্গে চাওয়াটাকে অনুধাবন করার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ দিতেও ভুললেন না সাকিব। জানালেন, যুক্তির যথার্থতা থাকায় বোর্ডকে রাজী করাতে খুব একটা কষ্টও করতে হয়নি, ‘আমি যখন তাদের সাথে কথা বলেছি, আমার পয়েন্ট অব ভিউটা তুলে ধরেছি। সেটা আমার কাছে কখনোই আনইথিক্যাল মনে হয়নি। সে কারণেই তারা হয়ত বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।’
অনুমতি দিলেও বিসিবি পথ খোলা রেখেছিল দ্বিতীয় টেস্টের আগে সাকিবের প্রোটিয়া সফরের দলে যোগ দেয়ার। সেটি তো হচ্ছেই না, বিসিবির আরেকটি চাওয়াও থাকল অনিশ্চয়তার মুখেই। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সাকিবকে খুব করেই চায় বোর্ড। চাওয়া-পাওয়ার সেই সিরিজ এখনও অনেক দূরে। সাকিবও রেখে দিলেন ধোঁয়াশাই। খেলবেন না কথাটি সরাসরি না বললেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানিয়ে দিলেন তখনও নিজের মর্জির ওপরই নির্ভর করবে তার মাঠে নামা।
‘সাউথ আফ্রিকা সিরিজ যখন শেষ হয়ে যাবে, তারপর বিপিএল, পরে শ্রীলঙ্কা সিরিজ। আমি ছয় মাসের জন্যই আবেদন করেছিলাম, সময়টার মাঝে আছে ওই শ্রীলঙ্কা সিরিজও। এখন দুই টেস্টে বিশ্রাম পেয়েছি। শ্রীলঙ্কার আগে চিন্তা করব ওই দুটো টেস্টে খেলতে পারব কি না, সেভাবেই তাদের সাথে (বিসিবি) কথা বলব। যদি তারা মনে করে আমার খেলা দরকার, আমিও ভেবে দেখব যে মানসিকভাবে ভাল অবস্থায় আছি কি না, পুরোটা দিতে পারব। তাহলে আমি অবশ্যই খেলব।’
টেস্ট থেকে সাকিবের অর্ধ-বছরের বিশ্রাম চাওয়ার বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে গত রোববার। ওই দিনভর সাকিব বা বোর্ডের তরফ থেকে চিঠির খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। পরে রাতে আকরাম খানই বিশ্রামের বিষয়ে সাকিবের চিঠি দেয়ার কথা গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন। পরে সোমবার তাকে বাইরে রেখেই দল ঘোষণা করে বিসিবি।
তবে বিশ্রাম চাওয়ার সময়টাতে রঙিন পোশাকে খেলা চালিয়ে যেতে আগ্রহী সাকিব। সাউথ আফ্রিকায় সিরিজের শুরুর ভাগে থাকছে দুই টেস্ট। পরে ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি। এই সফরেই টাইগারদের টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হতে যাচ্ছে তার।
চলতি বছরে অবশ্য ব্যাটে-বলে উড়ছিলেন সাকিব। ৭ টেস্টে ৬৬৫ রান করার পাশাপাশি ২৯টি উইকেটও নিয়েছেন। কদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের ম্যাচসেরা তিনি। আগামী ৬ মাসে বাংলাদেশের আর মাত্র ৪টি টেস্ট খেলার কথা, তাতে সংগ্রহগুলো আরও বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ ছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সামনে। সেখানে খানিকটা ছেদ টানল স্বেচ্ছা বিশ্রাম।