সোয়াজিল্যান্ড থেকে: আফ্রিকার দেশ সোয়াজিল্যান্ড কোনো মুসলিম দেশ না তাই ঈদ উপলক্ষে কোনো গরু ছাগল এর হাট তো বসে না। সে জন্য আমরা গ্রামের দিকে অথবা জংগল এর দিকে গরু খুঁজতে যাই। যেমনটি সারা বছরই যেতে হয়। কারণ হালাল মাংস সহজলভ্য না।
গ্রামের দিকে গেলে গরু, ছাগল, মুরগি এগুলো খুঁজে আনা যায়। তবে কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে টিকেট কেটে গিয়ে ইচ্ছা মত গরু, ছাগল, হরিণ ধরে আনা যায়,শিকার করা যায়। সে ক্ষেত্রে শুধু টিকেট এর টাকা টাই লাগে বাকি যা খুশি নিয়ে আসা যায় কোনো আলাদা টাকা দিতে হয় না।
জঙ্গলে গরু খুঁজতে গেলে অনেক সময় নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। প্রায়ই দেখা যায় অনেক গরুর ১টা করে পা নেই। কারণ বনের মধ্যে বাস করা সোয়াজিরা অনেকটা বর্বর, তাদের ইচ্ছে হলে একটা জ্যান্ত গরুর এক পা কেটে নিয়ে খেয়ে ফেলে।
জঙ্গলে বা লোকালয়ে যে গরুগুলো দেখা যায় তা অনেক বড় হয়। বেশিরভাগই কাল রঙের হয়ে থাকে। তাই রাতের বেলা জংগল এর পাশের রাস্তা গুলোতে এই গরুর কারণে অনেক বড় বড় এক্সিডেন্ট হয়। কারণ গরুরা যখন সড়ক-মহাসড়কে চলে আসে, আর তখন আবহাওয়া খারাপ থাকলে এগুলো দূর থেকে দেখা না যাবার কারণে ঘটে মারাত্মক এক্সিডেন্ট।
এই গরু কিনে আমরা মালিকের কাছেই রেখে আসি কারণ শহরে গরু কাটার কোনো নিয়ম নেই, কোরবানির সময়েও একই অবস্থা। দামটাও দেশের তুলনায় অনেক কম। ছাগল এর ক্ষেত্রেও একই কাহিনী।
ঈদের দিন ঈদের নামাজ পড়ে ছেলেরা আবার সেই গরুর মালিক এর বাড়িতে যায়। সেখানেই কোরবানি দেয়া হয়। এরপর মোটামোটা সাইজ করে বাড়িতে এনে তারপর কাটাকাটি করে।
এখানের যারা মুসলিম আছেন মানে এশিয়ান, তারা অনেক বেশি আন্তরিক।
আমরা যে বিল্ডিংয়ে থাকির এখানে ২০ টা ফ্ল্যাট। তার ভেতর ১৮টা ফ্ল্যাটে ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানি মুসলিম পরিবার এবং আমরাই শুধু বাংলাদেশী। ১৭টি ফ্ল্যাট থেকেই মাংস-মিষ্টি আসবে ঈদের দিনে। যে যার মত পাঠাচ্ছে, কেউ হয়ত ৩/৪ কেজি, কেউ বা ২/৩ টুকরা দেবে, কিন্তু দেবেই।
অনেক পরিবারই আছেন যাদের নাম জানিনা। অনেকের সঙ্গে সারাবছর কথা না হলেও এদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ। এদের সঙ্গে নিয়েই আসলে প্রবাসের ঈদ, বাংলাদেশে পরিবার-আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন না করতে পারার যে অতৃপ্ততা, তা ভুলে থাকার চেষ্টা!