নিউজিল্যান্ডের মত দলকে তাদেরই মাটিতে হারানো, সেটি আবার ২০২ রানের বিশাল ব্যবধানে। ওরকম জয়েই যুব বিশ্বকাপের সেমিতে পৌঁছে গেছে আফগানিস্তান। তাতে মোটেও অবাক নন দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) প্রধান আসগর স্টানিকজাই। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন, চমক এখানেই শেষ নয়। ক্রিকেট বিশ্বে ভবিষ্যতের জায়ান্ট হওয়ার পথে এক পা পড়ল কেবল আফগান যুবাদের।
বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মত দল বিশ্বকাপের সেমিতে উঠতে না পারলেও ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির তরুণ ক্রিকেটাররা। তাতে বিশ্ব ক্রিকেট প্রথমবারের মত চমকে উঠলেও দলটির আগমনী বার্তা পাওয়া গিয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতেই। টাইগার যুবাদের ঘরের মাঠ থেকে ৩-২ ব্যবধানে জিতে যায় আফগানরা। হয়েছে যুবাদের এশিয়া সেরাও।
যুব পর্যায়ে এভাবে আলো ছড়ানোর ভীতটা দুই বছর আগে থেকেই গড়া হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন স্টানিকজাই, ‘আমরা বিশ্বকাপ জিততে এসেছি, কেবল অংশগ্রহণ করতে নয়। আমরা দুই বছর আগে বৃহত্তরভাবে কাজ শুরু করেছি এ টুর্নামেন্ট নিয়ে। আমাদের লক্ষ্যই ছিল সেমিফাইনাল খেলা।’
গত বছর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানে ২০০০-০১ সালের আগে ক্রিকেট খেলার কথা ভাবতো না কেউ। তালেবানদের শাসন আমলে খেলাধুলা বিষয়টাই ভুলতে বসেছিল বারবার যুদ্ধের কবলে পড়া দেশটি।
এসিবি প্রধান টাইমস অব ইন্ডিয়াকে শুনিয়েছেন সেই গল্পটাও, ‘২০০০ সালের দিকে একটা মানুষও ক্রিকেট খেলার কথা ভাবতো না। ২০০৭-০৮ সালের দিকে সহযোগী দেশগুলোর সেরা হওয়ার পরপরই আমাদের দেশে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে। ফুটবলও বেশ জনপ্রিয়।’
বেশিরভাগ আফগান ক্রিকেটাররাই আসেন দেশের ইস্টার্ন ও সাউদার্ন অঞ্চল থেকে। কারণ সে পাশে পড়েছে পাকিস্তানের সীমান্ত। উন্মুক্ত সীমানা থাকায় পাকিস্তানে গিয়ে খেলে আবার নিজ দেশে ফিরতে পারেন ক্রিকেটাররা। এছাড়া খেলাটির পেছনে এখন বিনিয়োগ করতেও কিপ্টেমি নেই এসিবির। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তাদের ক্রিকেটাররা।
পরিবার থেকেও খেলতে খুব একটা বাধা পান না দেশটির ক্রিকেটাররা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে আছেন জাদরান সহোদর। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম জাদরান ও লেগ স্পিনার মুজিব জাদরান। এই মুজিব জাদরানের ঘূর্ণিতেই নিজ মাটিতে হাবুডুবু খেয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। দুই সহোদরের চাচাতো ভাই দৌলত জাদরান খেলেন আফগানিস্তান ক্রিকেটের মূল দলে।
ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে, প্রসার ঘটাতে পেশাদার প্রমোশনাল প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে এসিবি। ফলটাও পাচ্ছে হাতেনাতে। ফুটবলকে হটিয়ে আফগানিস্তানের ১ নম্বর খেলা এখন ক্রিকেট। খেলাটির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন রশিদ খানের মত ক্রিকেটাররা। যুব দল থেকে উঠে এসেই বিশ্ব ক্রিকেট মাতাচ্ছেন লেগস্পিনার রশিদ।
দেশটির পাইপলাইনে আছেন আরও ক্রিকেটার। সেমিফাইনালে উঠেছে যে দলটি, তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৬-১৭’কোটায়। দলটির কেউ কেউ পরবর্তী বিশ্বকাপেও ভাল সার্ভিস দেবে বলে বিশ্বাস স্টানিকজাইয়ের। শুধু যুব বিশ্বকাপেই নয়, পরবর্তীতে ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করার মত যোগ্যতাও আছে আফগানদের, এমন বলে একপ্রকার হুমকিই দিয়ে রাখলেন আফগান ক্রিকেটকে প্রধান।