বুদ্ধিজীবীদের ঘাতক জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ সদস্যর বেঞ্চ এক অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন, একটিতে মৃত্যুদণ্ডের বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন এবং অন্য একটিতে আপিল গ্রহণ করে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানান।
যে তিন অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তার মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ও পরিকল্পনার অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
তবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির আদেশ হওয়ায় আলাদাভাবে সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুজাহিদকে অব্যাহতি দেন সর্বোচ্চ আদালত।
আর ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বেঞ্চ।
এছাড়া অন্য দুটি অপরাধে মুজাহিদকে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মুজাহিদ আল বদর নেতা ছিলেন, তা প্রমাণিত হয়েছে। আল বদর নেতা মুজাহিদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে উস্কানি দিয়েছে, আদালত সঠিকভাবেই রায়ে দিয়েছেন। আল বদর ক্যাম্পে নিজামী, মুজাহিদ এবং গোলাম আযম গিয়েছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আপিলে প্রথমবারের মতো আপিল বিভাগের বিচারপতিরা সর্বসম্মত রায় দিয়েছেন বলেও জানান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা।
এটর্নি জেনারেল জানান, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর দণ্ড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরমধ্যে আসামিপক্ষ রিভিউ ফাইল করলে সরকারের রায় বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে।
তবে রিভিউ আবেদন করতে হয় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে।
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর তারা রিভিউ আবেদন করবেন।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ও পরিকল্পনা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের মতো অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
২০১০ সালের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে মুজাহিদকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই বছরের ২৯ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে। এ আলবদর নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হয় ২০১২ সালে ২১ জুন।