দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে অনন্য এক দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন দুই বিচারপতি। প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতির দায়িত্বে এলেন আপন দুই ভাই।
বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা সাতজন। সেই সাত বিচারপতির মধ্যে এমন দুইজন রয়েছেন, যারা সম্পর্কে আপন ভাই। তারা হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং তার বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেয়া তিনজন বিচারপতির একজন বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে যার পথচলা শুরু হল আজ থেকে।
তার থেকে বয়সে ছোট হলেও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিগত ৫ বছর ধরেই আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
একটি পরিবারের আপন দুই ভাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি হওয়াকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, ‘আপন দুই ভাই একসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি হওয়াটা অবশ্যই গর্বের। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এমন অনন্য দৃষ্টান্ত এই প্রথম।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপন দুই ভাই আপিল বিভাগের বিচারপতি হওয়ায় আজকের দিনটি বিচার বিভাগের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পিতা মৃত আব্দুল গফুর মোল্লা এবং মাতা মৃত নুরজাহান বেগম।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী
১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। আইএসসি পাস করেন ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরার সরকারি পিসি কলেজ থেকে। আর বিএ পাস করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে। এমএ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে।
এরপর এলএলবি পাস করেন ধানমন্ডি ‘ল’ কলেজ থেকে। ১৯৮১ সালে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৯ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী
১৯৫৪ সালের ২৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এলএলবি পাস করে ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া বার এসোসিয়েশনে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮০ সালে তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।
এরপর ২০০৯ সালে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালে তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা তিন বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আপিল বিভাগের নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি হলেন, বিচারপতি জিনাত আরা, বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান।