চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আপনার চিন্তাই বদলে দিতে পারে পৃথিবীকে

আপনি চাইলে শুধু নিজের অবস্থার পরিবর্তন নয় সমগ্র বিশ্বেরই এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিতে পারেন। শুধুমাত্র আপনার ভাবনাই বদলে দিতে পারে এই বিশ্বকে। এই চিন্তা-ভাবনাটা হতে হবে একটু ভিন্ন ধরনের। অন্য সবাই যেমন করে চিন্তা করে তেমন করে চিন্তা যদি আপনিও করেন তাহলে আর আপনার সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য রইলো কোথায়? আর এই জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন সাহসী উদ্যোক্তা হতে হবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় প্রতি দশটি উদ্যোগের মধ্যে ৯ টিই ব্যর্থ হয়। কিন্তু দশটার মধ্যে যে উদ্যোক্তার একটা উদ্যোগ সফল হয় সেইটাই বর্তমান বিশ্বকে এগিয়ে নেয় সামনের দিকে।

কিছু মানুষ বর্তমান বিশ্বে দুর্দান্ত কিছু আইডিয়া দিয়ে শুধু চলমান সভ্যতার গতিপথকেই পাল্টে দেয়নি, ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে সেই সব মানুষদেরও। তারা রীতিমত বিলিয়নিয়ার ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনী আইডিয়ার কারণে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এদের সবারই শুরু একেবারে জিরো থেকে। তারা শুধুমাত্র বিলিয়নিয়ার হয়েছেন নিজেদের মেধাকে কাজে লাগিয়েই। চলুন দেখি কিছু উদ্ভাবনী আইডিয়ার পেছনের গল্প । কেমন ছিলো সেইসব পরিবর্তনের মানুষদের প্রথম দিককার সংগ্রামের সময়টা।

ল্যারি পেজ ও সার্গেই ব্রিন এবং গুগল

ল্যারি পেজ ও সার্গেই ব্রিন যখন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি’র ছাত্র তখন কি কেউ ভেবেছিলো তারা এমন কিছু উদ্ভাবন করবেন যা চলমান বিশ্বের গতিপথটাই পাল্টে দিবে! বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি’র ছাত্র থাকা অবস্থায়ই তারা সার্চ ইঞ্জিনের কথা ভাবেন। তাদের উদ্ভাবিত সার্চ ইঞ্জিন এমন কিছু আলাদা বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলো যা বাজারে থাকা অন্য সার্চ ইঞ্জিনের তুলনায় এগিয়ে ছিলো। গুগলে কোনো কিছু লিখে সার্চ দিলেই সেই রকম প্রাসঙ্গিক আরো অনেকগুলো লিঙ্ক চলে আসে।

প্রতিষ্ঠার সময় সার্চ ইঞ্জিন গুগল চমক নিয়ে আসতে পেরেছিলো বলেই বর্তমানে এই মার্কেট নিয়ন্ত্রণ বলা যায় এককভাবেই তাদের হাতে। নিজেদের সৃজনশীল আইডিয়া দিয়ে তারা গুগলের মত একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করে। আর বর্তমানে ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন এই দুইজনের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ কত ধারণা করতে পারেন! তারা যৌথ ভাবে ৬৬ বিলিয়ন ডলারের মালিক!

শুধু তাই নয়। বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্বের সব থেকে জনপ্রিয় পণ্য ব্যবসাতেও গুগলের আধিপত্য লক্ষ্য করার মত। স্মার্টফোনের সব থেকে জনপ্রিয় ভার্সন অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ইন্টারনেটে ভিডিও দেখার জনপ্রিয় সাইট ইউটিউবও গুগলের মালিকানায় রয়েছে। বর্তমানে গুগল ভবিষ্যতের প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে গবেষণা করছে।

মার্ক জাকারবার্গ ও ফেসবুকের জন্ম কথা
একটু ব্যতিক্রম চিন্তার মানুষদের দিয়ে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর-কঠিন অনুশাসন মেনে চলানো যায় না, বা বলা যেতে পারে সেই কঠিন নিয়মের মধ্যে থেকে তারা নিজেদের আসল মেধাটা বের করতে পারেন না। এই যেমন ধরেন হাল আমলের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের কথা। তিনি বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড থেকে ছিটকে পড়া একজন ছাত্র। কিন্তু তাতে তার জীবন থেমে থাকেনি। তিনি বর্তমান বিশ্বকে এমন ব্যতিক্রমী এক উপহার দিয়েছেন যা নিয়ে দিন রাত মানুষ বুঁদ হয়ে থাকে।

জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁর চিন্তার মূল বিষয়টাই ছিলো হয় তার আইডিয়াটা খুব জনপ্রিয় হবে, না হলে কিছুই হবে না। বাস্তবতা হলো তার আইডিয়াটা বাস্তবতায় ফেসবুক বর্তমান শতকে মনে হয় এখন পর্যন্ত সেরাই বলা যায়। জাকারবার্গ এমন কিছু একটা আবিস্কার করতে চেয়েছিলেন যা দিয়ে মানুষের সঙ্গে সহজেই যোগযোগ করা যাবে।

আপনি জানলে অবাক হবেন ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠার থেকে এখন পর্যন্ত ফেসবুকের মার্কেট ভ্যালু ২৫০ বিলিয়ন ডলার। আর মার্ক জাকারবার্গের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এত কম বয়সে তার মত সম্পদশালী দ্বিতীয় আর কোনো ব্যাক্তি নেই এই গ্রহে।

জেব বেজোস ও আমাজন ডট কম
পণ্য বেচা-কেনার জন্য আমাদের প্রথাগত যে ধারনা তা আমূল পাল্টে দিয়েছে যে প্রতিষ্ঠান তার নাম আমাজন ডট কম। কোনো মার্কেট বা শপিং মলের বাইরেও যে পণ্য বেচা-কেনা সম্ভব তাও আবার ভার্চুয়াল জগতে, তা কে ভেবেছিল কয়েক দশক আগে? ঠিক সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন জেব বেজোস।

১৯৮৬ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে যোগ দেন ওয়াল স্ট্রিট এ। সেখানে তিনি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং নিয়ে কাজ করতেন। সেই সময় থেকেই তিনি ইন্টারনেট নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে থাকেন। তিনি ১৯৯৪ সালে আমেরিকানদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইন মার্কেট প্লেস আমাজন ডট কম। এই প্রতিষ্ঠান বই, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে ওয়াইন সবই বিক্রি করে অনলাইনে। বর্তমানে আমাজনের মার্কেট ভ্যালু ২০০ বিলিয়ন ডলার।

আর এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেব বেজোস’র মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৮ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের মার্চ মাসে বেজোস বিখ্যাত দ্য ওয়াশিংটন পোষ্ট পত্রিকাটি কিনে নিয়েছেন।

উপরের মানুষগুলো কিন্তু জন্ম সূত্রে কেউ ধনী নন। তাদেরকে বিশ্বব্যাপী বলা হয় সেল্ফ মেড বিলিয়নিয়ার। অর্থাৎ নিজের প্রচেষ্টায়, নতুন উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে এসে তারা সফল হয়েছেন। আপনিও চাইলে শুরু করতে পারেন। মনে রাখবেন আপনি ব্যর্থ হতে পারেন কিন্তু আপনার জীবন সেখানেই থেমে যাবে না। ১০ জন উদ্যোক্তার মধ্যে যদি ৯ জনই ব্যর্থ হয়, সফলও তো হয় একজন তাই না? কে জানে সেই একজন আপনিও হতে পারেন।