আন্দোলন না করে শ্রমিকদের কাজে ফিরতে হবে: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ঘোষিত মজুরিতে কোনো অসামাঞ্জস্যতা থাকলে জানুয়ারিতে সমাধান
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে কোনো ধরনের আন্দোলনে না জড়িয়ে ১৭ ডিসেম্বর থেকে পোশাক শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেন, ঘোষিত মজুরিতে কোনো অসামাঞ্জস্যতা, দুর্বলতা বা ফাঁক থাকলে জানুয়ারি মাসে তা সমাধান করা হবে।
শনিবার সচিবালয়ে পোশাক খাতের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির জরুরি সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। ত্রিপক্ষীয় এ সভায় মালিক ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নতুন ন্যূনতম মজুরিতে বৈষম্য করা হয়েছে দাবি করে গাজীপুর, আশুলিয়া, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছে। কোনো কোনো কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে, কাজ না করে শ্রমিকেরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠকে বসে এ সংক্রান্ত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটি।
নতুন বেতন নিয়ে শ্রমিকদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই আশ্বাস দিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক বিশ্লেষণ ও আলাপ-আলোচনা করে ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন মজুরি ডিসেম্বর থেকে বাস্তবায়ন হবে, শ্রমিকরা ডিসেম্বরের বেতনটা জানুয়ারি মাসে পাবেন।
মুজিবুল হক বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, গত কয়েক দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ঢাকা, গাজীপুরের কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে বেতন কাঠামো নিয়ে কিছু অপপ্রচার ও ভুল-বুঝাবুঝির কারণে শ্রমিকরা কাজ না করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- নতুন কাঠামোতে যখন বেতন পাবেন তখন বুঝতে পারবেন আসলে আপনাদের ভুল বুঝানো হয়েছে। অনুগ্রহ করে ১৭ তারিখ থেকে আপনারা কাজে যোগ দেবেন। জানুয়ারিতে মজুরি পাওয়ার পর কোনো গ্রেডে কোনো অসামাঞ্জস্যতা, দুর্বলতা বা ফাঁক থাকলে জানুয়ারি মাসে শ্রমিক নেতা ও মালিকদের সঙ্গে বসে ফাঁকগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করা হবে।
এসময় বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক শতাংশেরও কম পোশাক কারখানায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু একটা ফ্যাক্টরিতেও কোনো সমস্যা হোক তা চাই না। নতুন মজুরি নিয়ে কিছুটা ভুল-ভ্রান্তি ও ধারণা আছে। অনেকেই হয়তো জিনিসটা সম্পর্কে ক্লিয়ার না যে কীভাবে হয়েছে, তারা কী পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘নতুন কাঠামোতে মজুরিটা পাবেন জানুয়ারি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে। তখন যদি দেখেন কোনো ফ্যাক্টরিতে কোনো রকমের সমস্যা হয়েছে, তবে আমরা সমাধানের চেষ্টা করব। যদি সেখানে সমাধান না হয় বিজিএমইএতে আসতে পারবে। বিজিএমইএতে না পারলে সরকারের কাছে আসতে পারবে।’
তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর আমাদের নির্বাচন। আমি মনে করি মজুরি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি কোনো অসন্তোষ উসকে দিয়ে কেউ যেন না ছড়ায়- সবাইকে সেই অনুরোধ করছি।
ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু কারখানায় নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলন বা কাজ বন্ধ রাখার মতো ঘটনা চলমান রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হোক এটা আমরা চাই না।’
মজুরি বাস্তবায়ন নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ আছে, ‘আমরা বলব মজুরি না পাওয়া পর্যন্ত আপনারা কাজ বন্ধ করবেন না এমন আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মজুরি পাওয়ার পর যদি শ্রমিকদের মনে হয় অসঙ্গতি আছে, তখন সেই কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে বিজিএমইএ ও মন্ত্রণালয়সহ আবার মিটিং করে গেজেটে কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপের জন্য অনুরোধ করব সরকারকে।’