তীব্র আন্দোলনের মুখে মেট্রোরেলের ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা।
শনিবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে পিনেরা বলেন, তিনি মানবিকতার সঙ্গে দেশবাসীর কথা শুনেছেন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে তাদের অসন্তুষ্টি সম্পর্কে জেনেছেন। তাই আপাতত মেট্রোর টিকিটের দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত স্যান্টিয়াগো শহর এবং তার আশপাশের এলাকাগুলোতে কারফিউ চলবে বলে জানিয়েছেন জরুরি অবস্থা চলাকালীন স্যান্টিয়াগোর নিরাপত্তা প্রধান জেনারেল হাভিয়ের ইতুরিয়াগা দেল কাম্পো।
বিবিসি জানিয়েছে, মেট্রোরেলের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই চলছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই হাই স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শুক্রবার তাদের বড় একটি দল ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনগুলোতে হামলা চালায়। তারা স্টেশনের টার্নস্টাইল (টিকিট দিয়ে আনলক করা যায় এমন ঘূর্ণায়মান দরজা) টপকে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায় ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
এছাড়াও রাস্তাঘাট বন্ধ করেও ভাঙচুর চালানোর ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। যার ফলে পুরো শহর জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং গণপরিবহনের অভাবে ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।
পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবারই রাজধানী স্যান্টিয়াগোতে জরুরি অবস্থা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। রাজধানীর বিভিন্ন অংশে সেনা এবং ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছিল ওইদিন থেকেই। কিন্তু জরুরি অবস্থার মাঝেও শনিবার বিক্ষোভকারীরা নেমেছিল রাস্তায়।
শনিবার শহরের কয়েক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর অস্থির এলাকাগুলোতে নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হয়।
দুই দিনের সংঘর্ষে ৩শ’র বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ১৫৬ জন পুলিশ সদস্য এবং ১১ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্থিতিশীলতাই চিলিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভেদ প্রকাশ করছে। ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম ধনী দেশ চিলি; কিন্তু সবচেয়ে বেশি অসমতাপূর্ণ দেশগুলোর একটিও এটি। পুরো চিলি জুড়েই দিন দিন জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে।
বিশেষ করে স্যান্টিয়াগোতে এর অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। তাই দেশটিকে অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবি চলছে বহুদিন ধরেই।
ইতোমধ্যে শহরে অনুষ্ঠিতব্য সব সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে। ১৩৬টি মেট্রো স্টেশনের ৪১টি ভাঙচুরের শিকার হওয়ার কারণে শহরের পুরো ভূগর্ভস্থ পরিবহন ব্যবস্থা সোমবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
সরকার জানিয়েছে, ১৫ দিনের জরুরি অবস্থায় সেনাবাহিনী পুলিশকে টহলে সাহায্য করবে।এ সময়টায় জনসাধারণের চলাফেরা এবং সভা-সমাবেশের অধিকার সীমিত ঘোষণা করা হয়েছে।