চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই বসেছে নেমপ্লেট, বিরোধীরা বলছে ‘জবরদখল’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি

সম্পাদক পদে ভোট গণনা নিয়ে নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা ছাড়াই কার্যনির্বাহী কমিটির সবগুলো পদে নেমপ্লেট বসে গেছে।

নেমপ্লেট লাগানো নিয়ে ফেসবুকে চলছে দুই পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি পোস্ট। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই নেমপ্লেট লাগানোদের ‘নির্বাচিত’ বলে ফেসবুকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের অনেকেই নেমপ্লেট লাগানোকে স্বৈরাচারী কায়দায় রাতের অন্ধকারে পদ জবরদখল বলে ফেসবুকে সোচ্চার হয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা ছাড়াই বিজয়ী বলে গতকাল রাতে নেমপ্লেট লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা হয়ত হয়নি, তবে ওইদিন গণনার পর ফলাফল তো সবারই জানা। আর বিগত কমিটি গত বছরের ১১ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করে সে হিসেবেই গতকাল ১২ এপ্রিল অনেকে নেমপ্লেট লাগিয়ে দায়িত্ব শুরু করেছে। আর আমি তো আগে থেকেই আছি।’

অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের প্যানেলের সভাপতি ও সহ-সভাপতি প্রার্থীদের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে বলেছে তাদের নামের নেমপ্লেট লাগানের বিষয়ে তারা নিজেরাই কিছু জানেন না। এমনকি এবিষয়ে তাদের থেকে কোন সম্মতিও নেয়া হয়নি। আমরা এর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন মেনেই পদক্ষেপ নিবো। ‘ফ্রেশ কাউন্টিং’ হয়েই ফল ঘোষণা হতে হবে।’

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। পরেরদিন ১৭ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটায় ভোট গণনা শুরু হয়ে চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।

গণনায় বিভিন্ন টেবিল থেকে আসা ভোটের অনানুষ্ঠানিক যোগফলে বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস (বর্তমান সম্পাদক) কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। তবে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের কাছে এক পর্যায়ে আবেদন জানান আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল। এনিয়ে মধ্যরাতে হইচই-হট্টগোল শুরু হয়। অনেকেই সেই সময় নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ চান। সেই সাথে উপস্থিত কয়েকজন আপত্তিকর কথা বলার পাশাপাশি অসৌজন্যমূলক আচরণও করেন।

সেই রাতের প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আইনজীবী এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সমিতির দক্ষিণ হলে তখন অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামান ও উপ-কমিটির অন্য সদস্যরা।’

এক পর্যায়ে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভোট গণনার স্থান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে এ ওয়াই মসিউজ্জামান জানান সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে করা আবেদন দুই পক্ষের উপস্থিতিতে ১৮ মার্চ বেলা তিনটায় নিষ্পত্তি করা হবে। কিন্তু ১৮ মার্চ এ ওয়াই মসিউজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, ‘স্বাস্থ্যগত কারণে ১৭ মার্চ রাত ১টায় সমিতির বিদায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে আমি পদত্যাগপত্র দিয়ে দিয়েছি। এরপর আর তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে আসেননি এবং উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনের কোনো পদের ফলাফলই আর ঘোষণা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সম্পাদক পদে ‘ফ্রেশ কাউন্টিং’ চেয়ে আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে নিয়মিত মিছিল করে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের কিছু আইনজীবী। এমন প্রেক্ষাপটে গত ৩০ মার্চ বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ তম জরুরি সভা থেকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামি ৭ দিনের মধ্যে সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকগণ একত্রে বসে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করবেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ৬ জন সভাপতি ও ১১ জন সাধারণ সম্পাদকরা ফল ঘোষণার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেন।

গত ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের দেয়া এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ এপ্রিল দুপুরে সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, এএম আমিন উদ্দিন ও সাবেক সম্পাদক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচন সাব-কমিটির আহবায়ক এওয়াই মসিউজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গত ১৭ মার্চ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকালে সৃষ্ট অনাকাংখিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সেই সাথে ফলাফল ঘোষণা সংক্রান্ত বাকী কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে অনুরোধ জানান। এই প্রেক্ষিতে অ্যাডভোকেট এওয়াই মসিউজ্জামান শীঘ্রই ফলাফল ঘোষণার বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সম্মত হন।’ তবে এরপর আনুষ্ঠানিক কোন ফল ঘোষণা ছাড়াই ১২ এপ্রিল রাতে ফেসবুকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত আইনজীবীরা বিভিন্ন পদে নেমপ্লেট লাগানের ছবি পোস্ট করেন। যেখানে ‘নির্বাচিত’ বলে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানানো হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন। আর মোট ভোটার ছিল ৮ হাজার ৬২৩ জন। সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচনী সাব-কমিটি (নির্বাচন কমিশন) নির্বাচন পরিচালনা করেন। কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতির দুটি এবং সদস্যের তিনটি পদসহ মোট ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত (সাদা প্যানেল) প্রার্থীরা ভোটের অনানুষ্ঠানিক যোগফলে এগিয়ে ছিলেন। আর সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সম্পাদকের দুটি এবং সদস্যের চারটি পদসহ মোট আটটি পদে এগিয়ে ছিলেন বিএনপি সমর্থিত (নীল প্যানেল) প্রার্থীরা।