চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আনসারুল্লাহ বাহিনীর হত্যার টার্গেটে এক পত্রিকা সম্পাদক

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের টার্গেটে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের নামও ছিল। বিবাহ সংক্রান্ত একটি হাদিস পত্রিকায় প্রকাশের জেরে তাকে ইসলাম বিদ্বেষী উল্লেখ করে হত্যার টার্গেট করেছিলেন এবিটির সদস্যরা।

এছাড়াও দেশের বিশিষ্টজন কথিত ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের চিহ্নিত করে হত্যার জন্য তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এটিবি) একটি সেল কাজ করছিল।

এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশে যুক্ত হয়ে কথিত ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ অ্যাক্টিভিস্টদের উপর নজরদারিও করছিল ওই সেলের সদস্যরা

বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এবিটির ৪ সক্রিয় সদস্যকে আটক করে র্যাব-১।

আটকরা হলেন- শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মো. আম্মার হোসেন (২০), রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪), রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪) এবং আব্দুল মালেক (৩১)। এসময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন এন্ড গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি সাভারের আশুলিয়া এলাকা থেকে এবিটির সদস্য আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে গ্রেফতার করা করে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহম্পতিবার রাতে এই চারজনকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা এবিটির সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আটক শাহরিয়ার ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে দুই বছর বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছিলেন। এরপরে হাইস্কুলে অধ্যায়ন শুরু করে সে। ২০১৭ সালে অনলাইনে (ফেসবুক) আমানের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে এবটিতে যোগদান করেন শাহরিয়ার। আমানের নির্দেশনায় সে ৪-৫ টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার প্রচারণা চালাতো এবং জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করত। এভাবে সে ৭-৮ জনকে এবিটি’র সাথে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। শাহরিয়ার এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর নজরদারি করা শুরু করে।

তিনি বলেন, শাহরিয়ার ছদ্মবেশে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাস্তিক গ্রুপ নামে একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ঢুকে পরে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই মিশনে শাহরিয়ারসহ সংগঠনের আরও দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ধারালো অস্ত্রসহ ঢাকা থেকে একজন এবং বরগুনা থেকে একজন বগুড়া যায়। এরপর তারা ওই অ্যাক্টিভিস্ট সদস্যকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে বলে। কিন্তু সে দেখা না করায় তাদের মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়।

আটক রাসেল সম্পর্কে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালে সে এসএসসি পাশ করে একটি গামেন্টর্সে চাকুরি নেয়। ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখে অন্যদের সাথে এ সম্পর্কে আলোচনা করত। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেইসবুকে মাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে নজরদারির নিয়ন্ত্রক আমানের মাধ্যমে এটিবিতে যোগদানে উদ্বুদ্ধ হয়। সে নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ, তাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছিল।

তিনি বলেন, অন্যদিকে রবিউল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাশ করে। অতপর সে বগুড়া পলিটেকনিক্যালে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালে শেষ করে। ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে রবিউল। আব্দুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেট গাড়ি চালক। সে ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে এবিটিতে যোগদান করে।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গোপনে তারা সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছে সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবে বলে জানায়। এরজন্য তারা ইতোমধ্যে অর্থ সংগ্রহ করেছে। তারই একাংশ গ্রেপ্তার রাসেলের নিকট জমা ছিল বলে জানা যায়।