মসজিদের কলেবর বেড়েছে অনেক। পবিত্র জুম্মার দিনে, বা ওয়াক্তের নামাজেও মুসল্লীদের উপচে পড়া ভিড় এখনও চোখে পড়ার মত। দামি কার্পেট, এয়ারকন্ডিশনারসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধায় পরিপূর্ণ। কিন্তু নেই কেবল সেই ঐতিহ্যের ছাপ।
যে মসজিদটি নির্মানের মধ্য দিয়ে চকবাজারের উদ্বোধন করেছিলেন মুঘল সুবাদার শাহেস্তা খান, যে মসজিদটি উঁচু প্লাটফর্মের ওপর তৈরি দেশের প্রাচীনতম স্থাপনা; সচেতনার অভাবে এমন অমূল্য ঐতিহ্য আজ পরিণত হয়েছে সাধারণ এক স্থাপনায়। মুঘল রীতি এবং এবং স্থাপত্য শৈলীর সামান্যতম চিহ্নও আর চোখে পড়ে না। এর চেয়ে অনেক পড়ে নির্মিত অনেক মসজিদকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করলেও; সে তালিকায় যোগ হবার যোগ্যতা হারিয়েছে ঢাকার আদি এ নিদর্শনটি।
ইতিহাসবেত্তা এবং ঢাকা নিয়ে গবেষকদের মতে ১৬৭৬ সালে সুবাদার শায়েস্তা খান চকবাজারের পশ্চিম প্রান্তে এই মসজিদ নির্মাণের মধ্য দিয়েই চকবাজারের উদ্বোধন করেছিলেন। মসজিদটির আদি গড়নে ছিল তিনটি গম্বুজ।এই মসজিদের দেয়াল ছিল মোগল রীতি অনুযায়ী পুরু। প্রবেশ দরোজার খিলানগুলো ছিল চওড়া আর প্রশস্ত। এই ধরনের রীতি প্রচলিত ছিল আওরঙ্গাবাদ ও আহমদ নগরে। মসজিদের ভিতরকার নকশা তিনটি বে’তে বিভক্ত ছিল, যার মাঝখানের বে ছিল বর্গাকার, কিন্তু দুপাশের বে ছিল আয়তাকার। তিনটি বে’র উপরেই গম্বুজ দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল, মাঝখানের গম্বুজটি ছিল তুলনামূলক বড় আকৃতির।কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সংস্কারকারের ফলে বর্তমানে এর আদি সে রূপটি আর দেখা যায় না। তবে একটি মাত্র জিনিস আগের মতই রয়েছে। সেটি হচ্ছে অষ্টকোণাকৃতির কেন্দ্রীয় মেহরাবটি, যাতে সংস্কারের পরেও নির্মানকালীন বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা হয়েছে।
শায়েস্তা খান চকবাজারের পশ্চিম প্রান্তে মসজিদটি নির্মান করেছিলেন। এরপর মসজিদকে ঘিরে বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় এখন মসজিদটি চকবাজারের কেন্দ্রস্থলে বলে মনে হবে। বর্তমানে মসজিদটির উত্তর দেয়াল ভেঙ্গে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আর পূর্বদিকের বাড়তি অংশে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। এই তিনগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির গম্বুজ ভেঙে আরেকটি তলা নির্মাণ করা হয়েছে। এই দ্বিতল ছাদের ওপর নতুন তিনটি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও এখন আগের বৈশিষ্ট্য নেই তবুও এককালে শায়েস্তা খান একজন খ্যাতিমান নির্মাতা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি দক্ষিণ ভারতীয় রীতি এ দেশে জনপ্রিয় করে তোলেন। মোগল মসজিদগুলো সাধারণত মাটি থেকে উঁচু প্লাটফরমের ওপর তৈরি করা হতো। চক মসজিদটির প্লাটফর্ম ছিল মাটি থেকে দশফুট উঁচুতে। আদিতে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ৫০ ফুট আর প্রস্থ ২৬ ফুট।
মসজিদটির তত্ত্বাবধায়ক মো. ইয়ার হোসেন মসজিদে বসে আলাপকালে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তুলে ধরছিলেন মসজিদটির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড।তিন বলেন প্রতি ওয়াক্তের নামাজে মসজিদটিতে প্রচুর মুসল্লীর সমাগম ঘটে। এটি পরিচালনা করছে ম্যানেজিং কমিটি। মসজিদের একাধিক ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, সুইপারসহ সবার বেতন কমিটির মাধ্যমেই নির্বাহ করা হয়।তাছাড়া মসজিদের নিচে যে মার্কেট রয়েছে সেখান থেকেও মসজিদের আয় আসে।
মুসল্লীদের চাপে মসজিদটি পশ্চিম দিকে আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বলে জানান মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক।