ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি করা নিয়ে পদপ্রার্থীদের নিয়ে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। বিশেষ করে শীর্ষ দুই পদের প্রার্থীরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে অন্য প্রার্থীর নামে চালাচ্ছেন নানা ধরনের অপপ্রচার। তবে নেতৃত্ব বাছাইয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে চলছে গোয়েন্দা তৎপরতাও।
এমন পরিস্থিতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে দেখা গেছে শীর্ষ পদের জন্য অবেদন করা প্রার্থী ও তার পরিবারকেও।
ঠিক তেমনই এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন প্রকৌশলী রাহুল নন্দী তার ছোট ভাই আদিত্য নন্দীকে নিয়ে। আদিত্য নন্দী এবার ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য আবেদন করেছেন। তবে এ অবেদনই যেনো বিপত্তি ডেকে আনে তাদের জন্য।
হয়রানি করতে তাদের দরিদ্র্য বাবার দোকানে গিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে ভাঙ্গা দোকানের মালিক বাবার গাড়ীর শো-রুম রয়েছে কী না?
এ বিষয়ে বড় ভাই রাহুল নন্দী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী কেন বা কি জন্যে আদিত্যর মত গরীব দু:খী ঘরের ছেলেকে বড় রাজনীতিবিদ হবার প্রেরণা জোগায় সে বিষয়ে দু:খ প্রকাশ করে লিখেছেন,
‘আদিত্য নন্দী এক অনন্য আর অবিচ্ছেদ্য গরীবি ইতিহাস। মানুষ চায় অর্থ, মান, যশ-এ পরিপূর্ণ হতে, আর সে চায় তার বিপরীত। পেশাজীবি কখনো ভাবনায় ও আনেনা তার কর্ম ফল তাকে বন্দনা দিবে। বড় ভাই হয়ে ছোট ভাই এর গরীবি ইতিহাস লিখছি। কোনো পরিবার চায় না তার মেধাবী সন্তান রাজনীতি করে জীবন’কে নষ্ট করুক (এটাই সমাজের বাস্তবতা)। তবে আদিত্য কেন? এখনো মনে পড়ে, দুই ভাই পিঠাপিঠি পড়া লেখা করছি, আমি “পুরকৌশল” নিয়ে “কুয়েট’ থেকে স্নাতক শেষ করলাম আর সে স্নাতক এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল।
পরিবারের একমাত্র রুজি-রোজগার আমাদের বাবা’র ঘাড়ে। বাবা এমন এক আদর্শের মানুষ, নিজের দৈনিক রোজগার না হলে খালি হাতে বাড়ী ফিরবে কিন্তু কারো কাছ থেকে নিয়ে পরিবার চালাবে না। সে কাজ টা “মা’ সেরে নিত। তাই আমাদের পড়ালেখার জীবন সংগ্রাম না বললেই হয়।
পড়ালেখা আমাদের দুই ভাই এর একমাত্র মেরুদণ্ড যার পেছনে স্বপ্ন তৈরী করতে অশেষ মানসিক শক্তি দিয়ে প্রেরণা দিয়েছে আমাদের “মা”। আজ মা’র কাছে শুনলাম কে বা কারা আমার বাবা’র ভাঙ্গা দোকানে এসে জিজ্ঞেস করল ‘উনার গাড়ী’র শো রুম আছে কিনা’।
ছোট ভাই মেধাবী হয়েও এক প্রকার বেকার রাজনীতি করে। তাই পরিবার আমার কাঁধে চাপা। পরিবার নিয়ে ভাবে না সেই বিষয়টা না আমাকে যতটা পীড়া দেয়, তার চেয়ে বেশী ব্যথা লাগে সময় এর সাথে পিছিয়ে পড়া ছোট ভাই এর মেধাবী অস্বচ্ছলতা।
যে বাবা’র দৈনিক ১০০-২০০ টাকা আয় করতে হিমসিম খেতে হয়, তাকে নাকি জনৈক অনুসন্ধানকারী জিজ্ঞেস করে গাড়ি’র শো-রুম কোথায়? আমার ছোট ভাই ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ এর সভাপতি প্রার্থী, ভাবনায় এলো সে কারণে বাবার গাড়ির শো-রুম এর উদ্ভাবন। আজ ছোটো ভাইকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ‘কিছু না করেও আজ তোর কাঁধে অন্যায় আর দুর্নীতির অভিযোগ তবে কার জন্যে সৎ রাজনীতি করছিস? কেন তোকে আজও দুই বেলা ভাত খাওয়ার পয়সা পরিবার থেকে চেয়ে নিতে হয়?
এত সব অভিযোগ থাকা সত্বেও আনন্দ এক জায়গাতে আজ সভাপতি না হয়েও মানুষের ঘরে ঘরে তার সভাপতি হয়ে ওঠার প্রার্থনা। প্রার্থনা দুই ধরনের, সকাম- যেখানে নিজেই নিজের জন্যে কিছু চাওয়া হয়; নিষ্কাম- অন্যে নিজের জন্যে চায়।
ঈশ্বর নিষ্কাম প্রার্থনা কে সফল করে। তাই ছোট ভাই সভাপতি হোক বা না হোক, একটা ব্যাপার সত্যি সে মঙ্গল কামাইছে। আজ সবার মধ্যে তার সভাপতি হয়ে উঠার মঙ্গল প্রার্থনা। সেটাই “আসল অর্জন”। তাই যে বা যারা তার নামে অপপ্রচার চালায় তারা শুধু “অর্থ, মান, যশের অধিকারী হবা, মঙ্গল কামাইতে পারবা না। প্রধানমন্ত্রী কেন বা কি জন্যে ‘আদিত্য’র মত গরীব দু:খী ঘরের ছেলে পেলেকে ‘বড় রাজনীতিজ্ঞ হবার প্রেরণা জোগায় তা আমার মত বামুনের মাথায় আসে না। রাজনীতি আজ তাদের জন্যে, যাদের লম্বা হাত আছে।