‘আদালত কখনই সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা ব্যক্তির পক্ষে যেতে পারেনা’ উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আদালত কখনই ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে যাবেনা।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় এক আসামীর অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নামঞ্জুর করে দেয়া আদেশে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদকদ্রব্য ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি অসংখ্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নিরপরাধ তরুণ-তরুণী তথা ছেলে-মেয়ের মৃত্যুর কারণ। অসংখ্য নিরপরাধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণী ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকে আসক্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে। তাই ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এরা সমাজের জঞ্জাল স্বরূপ। এদের কর্মকাণ্ড সামাজের জন্য মারাত্মক হুমকি। সুতরাং এদের জামিনের বিষয়ে অসংখ্য নিরাপরাধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের বিষয়টি সর্বাজ্ঞে বিবেচনায় নিতে হবে। আদালত কখনই ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে যাবেনা। আদালত কখনই সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা ব্যক্তির পক্ষে যেতে পারেনা। আদালত কখনই অসংখ্য নিরপরাধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ তরুনীদের মৃত্যুর কারণ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের পক্ষে যাবেনা।’
১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় গাজিপুরের কালিগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সোহেল নামের এক আসামীর জামিন আবেদন গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর নামঞ্জুর করেন গাজীপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত। পরবর্তীকালে এই আদেশের বিরুদ্ধে সোহেলের করা আবেদন গত বছরের ২১ অক্টোবর খারিজ করেন গাজীপুরের সিনিয়র দায়রা জজ আদালত। এরপর সোহেল হাইকোর্টের জামিন আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী রুল জারি করে আসামী সোহেলের অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। তবে বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী রুল জারি করে সোহেলের অন্তবর্তীকালীন জামিন আদেশ প্রত্যাখান করেন। সোহেলের অন্তবর্তীকালীন জামিন বিষয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চের দ্বিধাবিভক্ত এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চে পাঠান। সে অনুযায়ী এই বেঞ্চ বিষয়টির ওপর শুনানি নিয়ে আদেশ দেন। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশে বলেছেন, ‘রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামী সোহেলের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নামঞ্জুর করা হলো। আর আদেশের অনুলিপি দেশের সকল মুখ্য মহানগর হাকিম এবং মুখ্য বিচারিক হাকিম বরাবর ই-মেইল পাঠানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
আদালতে আসামি সোহেলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোঃ হারুন-অর-রশিদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আশেক মমিন। তার সাথে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার।