গ্রিন লাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া আপাতত আটকে গেল। ক্ষতিপূরণ বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন বাস কর্তৃপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন।
আদালতে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আদেশের বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন: রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ রুল নিস্পত্তি পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
তবে গ্রিন লাইনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে তা এই স্থগিতাদেশের মধ্যে পড়বে না।
২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়িতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় এক যুবকের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই যুবককে চাপা দেওয়ার পর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসটি এবং তার চালককে পুলিশ আটক করে।
পরে পুলিশ জানায়, মো. রাসেল (২৫) নামের ওই যুবক একটি প্রাইভেট কার চালাচ্ছিলেন। বাসটি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস চালক তার ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ির বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেট কার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের রুলসহ আদেশ দেন।
পরবর্তীতে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সাথে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে রাসেলের চিকিৎসার জন্য যা খরচ তা দিতে বলা হয়।
এরপর গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারের হাতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় গ্রিন লাইন বাস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রাসেলের চিকিৎসা বাবদ আরো সাড়ে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে এইদিন আদালতকে জানায় গ্রিন লাইনের আইনজীবী।
এরপর হাইকোর্ট রাসেকে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা কিস্তিতে দিতে নির্দেশ দেন। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে রাসেলকে টাকা দিয়ে ১৫ তারিখের মধ্যে তা আদালতকে জানাতে বলা হয়। সে অনুযায়ী গত ২৯ জুলাই প্রথম কিস্তির ৫ লাখ টাকার চেক রাসেলকে তুলে দেয় গ্রিন লাইন বাস কর্তৃপক্ষ। এদিকে ক্ষতিপূরনের বাকি ৪০ লাখ টাকার বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামি ১৭ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে।