চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা: ইসলামী সৌন্দর্য্যের অন্যতম উপাদান

“তোমরা আত্মীয়ের হক আদায় করো।” সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহর এ আদেশের মাধ্যমে ইসলামের অপার সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। সাম্য ও মৈত্রীর ধর্ম ইসলাম অন্যান্য অধিকারের পাশাপাশি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও হক আদায়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে।

কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ন্যায়, ইহসান ও আত্মীয়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন” (সুরা নাহল-৯০)। সুরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার পরেই আত্মীয়ের ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করে বলেন, “আর আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে শরিক কর না।  পিতা-মাতা ও আত্মীয়ের প্রতি সদ্ব্যবহার কর।” এভাবে পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আত্মীয়তার সম্পর্ক মজবুত রাখার আদেশ দিয়েছেন।

পবিত্র হাদিসে রাসুলেও এসেছে অসংখ্য বর্ণনা। কোথাও সম্পর্ক রক্ষাকারীর ব্যাপারে সুসংবাদ আবার কোথাও ছিন্নকারীর ব্যাপারে হুশিয়ারি। হজরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.)’র বর্ণনা মতে, নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা সফররত ছিলেন। জনৈক বেদুইন তাঁর সাথে সাক্ষাত করে বললো, “যা আমাকে বেহেশতের নিকটবর্তী এবং দোজখের দূরবর্তী করবে; তা অবহিত করুন।” তিনি ইরশাদ করলেন: “তুমি আল্লাহর ইবাদত কর, তার সাথে শরিক করো না, নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখো। (বুখারি ও মুসলিম)

লক্ষণীয় বিষয় এই যে, এখানে নবীজি যে সমস্ত বিষয়ের পর আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন, এর সবগুলোই ইসলামের এমন মৌলিক বিষয়, যা ছাড়া ইসলাম কল্পনা করা যায় না। সুতরাং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, তা এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু অনুমান নয়, এর প্রকৃষ্ট নমুনা নিচের হাদিসে কুদসিটি। আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আমিই রহমান তথা দয়ালু, আত্মীয়তার বন্ধন হচ্ছে রহিম; যা আমি আমার নাম থেকে নির্গত করেছি।

সুতরাং যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে আমিও তার সাথে সম্পর্ক রাখি এবং যে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমিও তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদকারী” (সুনানে আবু দাউদ-১৬৯৪)।

এছাড়াও হজরত আনাস (রা.)’র বর্ণিত এক হাদিসে রিজিক ও হায়াতবৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার কথা বলা হয়েছে। নবীজির নুরানি জবানের ইরশাদ: “যে ব্যক্তি স্বীয় রিজিক বৃদ্ধি ও দীর্ঘজীবী হতে চায়; সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে,” (সুনানে আবু দাউদ-১৬৯৩)

কিয়ামতের ময়দানেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীরা বিশেষভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হবে। বঞ্চিত হবে ছিন্নকারীরা।

হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তিনটি জিনিস কিয়ামাতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে থাকবে।

১. কুরআন; যা জাহের-বাতেন দু’দিক থেকে বান্দাদের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে।
২. আমানাত।
৩. আত্মীয়তার বন্ধন।

এ তিনটি জিনিসের প্রত্যেকে ফরিয়াদ করবে, “হে আল্লাহ, যে আমাকে রক্ষা করেছে তুমি তাকে রক্ষা কর। যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তুমি তাকে ছিন্ন কর” (মিশকাতুল মাসাবিহ-২১৩৩)।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর ব্যাপারে কঠিন শাস্তির ঘোষণা এসেছে নবীজির পক্ষ থেকে। ইসলামের ত্রানকর্তা, খলিফাতুর রাসুল আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোনো পাপ নেই। আল্লাহ তাআলা যার শাস্তি পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন” (ইবনে মাজাহ-৪২১১)।

বুখারি ও মুসলিম শরিফের অভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”

এ ছাড়াও হাদিসে একটি মজার বিষয়ের বর্ণনা এসেছে। আমাদের সমাজে সচরাচর এর বিপরীত আমলই লক্ষ্য করা যায়। হাদিসটিতে যারা সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়, তাদের প্রতিবাদ কীভাবে করা যায়; সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা রয়েছে।

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার এমন কিছু আত্মীয় আছে, যাদের সাথে আমি আত্মীয়তা বজায় রাখি অথচ তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, অথচ তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে।  তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের মত আচরণ করে।’ নবীজি ফরমালেন ‘‘যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করেছো (উত্তম প্রতিবাদ করেছো) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অনড় থাকবে।’’ (সহিহ বুখারি-২৫৫৮)

ইসলাম মানবিক।  ইসলামের সৌন্দর্য শাশ্বত। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা অনস্বীকার্য। আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখা মানবিক গুণাবলির অন্যতম দিক। ইসলামে এ দিকের গুরুত্বারোপ অনস্বীকার্য।

আসুন, হিংসা ভুলে যাই। রেষারেষি পরিত্যাগ করি। নজরুলের মত গেয়ে উঠি-
“আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব-নিখিল ইসলামে মুরিদ।”