চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আত্মসমর্পণ, এবং হোয়াইটওয়াশ

কেবল মাহমুদউল্লাহই যা একটু লড়লেন। বাকিরা এলেন-গেলেন! তামিম-সৌম্যদের উইকেটে যাওয়া-আসার মিছিলে তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৬৪ রানের বড় জয় তুলে নিলো নিউজিল্যান্ড। সঙ্গে সম্পন্ন করল হোয়াইটওয়াশ।

তিন ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ডানেডিনে একেবারেই উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, কোনোমতে একশ পার করতে পেরেছিল। ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে লড়াই করার পুঁজি জমালেও বাজে ফিল্ডিংয়ের মাশুল দিয়ে হেরে বসে, সঙ্গে সিরিজটাও।

শুক্রবার ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে তৃতীয় ওয়ানডেতে কিউইদের দেয়া ৩১৯ রানের লক্ষ্যে ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ রানে গুটিয়ে গেছে তামিম ইকবালের দল। অন্যদিকে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।

ডেভন কনওয়ে ১২৬ ও ড্যারেল মিচেল অপরাজিত ১০০ রানে টাইগারদের লক্ষ্যটা তিনশ পেরিয়ে নেন। দুজনেরই এটি প্রথম ওয়ানডে শতক।

পেস-সুইংয়ে বাজিমাত করে রুবেল-তাসকিন দিনের শুরুতে যে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, শেষঅবধি সেটি ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারল না তাতে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২৯ ম্যাচ খেলেও মিলল না জয়ের দেখা।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের মাত্র তিনজন দুঅঙ্কের কোটা পেরোতে পেরেছেন। লিটন ২১ বলে ২১, মুশফিক টেস্ট খেলে ৪৪ বলে ২১ করেছেন। শেষ পর্যন্ত লড়ে অপরাজিত ফিফটি তুলে সঙ্গীর অভাবে ভোগা মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে এসেছে ৭৬ রান। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩ বলের ইনিংস তার।

বাকি দুঅঙ্কটি মি. অতিরিক্ত খাতের, এসেছে ১২! টাইগারদের মধ্যে সৌম্য ১, তামিম ১, মিঠুন ৬, মিরাজ শূন্য, মেহেদী ৩, তাসকিন ৯, রুবেল ৪ রানে কেবল হতাশাই বাড়িয়েছেন।

৭.৪ ওভারে ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে কিউইদের সেরা নিশাম। ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন ম্যাট হেনরি। বাকি উইকেটটি কাইল জেমিসনের।

সকালে টানা তৃতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে যান তামিম। গত দুম্যাচে ব্যাটে ডাক পড়লেও এবার শুরুতে বোলিংয়ের আমন্ত্রণ পান। উইকেটে এসে পেস আক্রমণে দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সঙ্গে ক্যাচ হাতছাড়া, রানআউটের সুযোগ হাতছাড়া ও বাজে ফিল্ডিংও দেখিয়েছে!

এক হেনরি নিকোলসকেই দুবার রানআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। চতুর্থ ওভারে মিডঅফে তার ক্যাচ নিতে মাহমুদউল্লাহ। অষ্টম ওভারে কিউই ওপেনারের ক্যাচ ছাড়েন মুশফিক।

নিকোলস (১৮) অবশ্য বিপদের কারণ হতে পারেননি। লিটনের ক্যাচ বানিয়ে সাফল্য আনার শুরুটা করেন তাসকিন। ড্রাইভ করতে গিয়ে কিউই ওপেনার গালিতে ক্যাচ দিলে ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

তারপর রুবেলের জোড়া ধাক্কা। আরেক ওপেনার গাপটিল (২৬) ও একাদশে ফেরা অভিজ্ঞ টেলরকে (৭) সাজঘরের পথ দেখান টাইগার পেসার। স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে পুল করতে যেয়ে মিডঅনে লিটনের দ্বিতীয় ক্যাচ হন গাপটিল। টেলরের ক্যাচ ছেড়েছিলেন মোস্তাফিজ। খানিক পরে স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়েন তিনি।

গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথাম উইকেটে জেঁকে বসার আগেই মিরাজের উড়ন্ত এক দর্শনীয় ক্যাচে পরিণত হন। ৭ রান করা কিউই অধিনায়কের উইকেট তুলেছেন সৌম্য সরকার।

পরে ড্যারেল মিচেলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ডেভন কনওয়ে। দুজনে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন। দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি।

এই সিরিজেই অভিষিক্ত ২৯ বছর বয়সী বাঁহাতি কনওয়ে তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে পান সেঞ্চুরির দেখা। ১৭ চারে ১১০ বলে ১২৬ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন। মোস্তাফিজের বলে যখন বদলি ফিল্ডার আফিফের ক্যাচ হন, ততক্ষণে দলকে বিপদমুক্ত করে ফেলেন কনওয়ে।

এরপর ম্যাচে লিটনের তৃতীয় ক্যাচ বানিয়ে জেমস নিশামকে (৪) ফিরিয়ে তৃতীয় সাফল্য তুলে নেন রুবেল। কিন্তু মিচেল থেকে যান বিপদ হয়ে, দ্রুতলয়ে তুলতে থাকেন রান। ২৯ বছর বয়সী ডানহাতি মিচেলেরও এই সিরিজেই অভিষেক, তারও প্রথম সেঞ্চুরি ওঠে, আগে ছিল না ফফটিও। ৯ চার ২ ছয়ে ৯২ বলে ঠিক ১০০ করে অপরাজিত থাকেন তিনি।

রুবেল ৩ উইকেট নিলেও খরচ করেছেন ৭০ রান। তাসকিনের ১ উইকেট নিতে খরচ ৫২ রান। ৮৭ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি মোস্তাফিজ। সৌম্য ৮ ওভারে ৩৭ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।