সাউথ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর আঞ্চলিক নানা মতবিরোধ ও সমস্যা সত্ত্বেও নিজেদের সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করার প্রত্যয়ে সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ হয়েছে। শুক্রবার ভারতের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ হয়। সাউথ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো এ দিনটি বাংলাদেশের জন্যও অবশ্যই একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাউথ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মতো তথ্যপ্রযুক্তিসহ টেলি মেডিসিন, টেলি শিক্ষা, আন্তঃসরকার নেটওয়ার্ক, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে জরুরি যোগাযোগ, টেলিভিশন ব্রডকাস্ট, ডিটিএইচ টেলিভিশন সেবায় বাংলাদেশ আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আরো খুশির বিষয় হলো, এই স্যাটেলাইটের ১২টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে একটি বিনামূল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রায় ৪৫০ কোটি রুপি খরচ করে প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোকে এমন উপহার দেয়ায় আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানাই। শুরু থেকেই ভারত এ উপগ্রহকে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে বলে আসছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপগ্রহের আওতাভুক্ত সব দেশের সরকারপ্রধানও একই কথা বলেছেন। এখানেই আমরা আশাবাদী হতে চাই। কেননা আমরা মনে করি, বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক রেখে কোন দেশের পক্ষেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বরং এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সব দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করা উচিৎ। কিন্তু এখানেও পাকিস্তানের একঘরে মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি। কেননা সার্কভুক্ত সব দেশ এই স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও প্রথমে রাজি হয়ে এই প্রকল্প থেকে পকিস্তান নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। এ কারণে এই স্যাটেলাইটের নাম ‘সার্ক স্যাটেলাইট’ ঠিক করা হলেও পরে নাম বদলে রাখা হয় ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’। পাকিস্তান নামক দেশটি যে সাউথ এশিয়ার বিষফোঁড়া তা এই উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক অন্যান্য সংকটগুলোর বিষয়েও ভারতের সদিচ্ছা থাকলে তা সহজেই সমাধান করা সম্ভব। কেননা এই স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে তা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে। তাই তিস্তা ও সীমান্ত ইস্যুসহ বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়ে এই অঞ্চলের মানুষের সহযোগিতায় স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে ভারতের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান রইলো।