বরেণ্য সংগীতশিল্পী মো. রফি বলেছিলেন, ‘আপনারা আমার গান শোনেন, আর আমি শুধু মান্না দের গান শুনি।’ আজ ১ মে মান্না দের জন্মদিন। এই দিনটি উপলক্ষে প্রয়াত এই সংগীতশিল্পীর সাক্ষাৎকার থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো নিয়ে এই প্রতিবেদন।
‘কফি হাউস আমার বাড়ির খুব কাছেই ছিল। কিন্তু যে কেউ জানলে অবাক হবে, আমি কোনো দিন কফি হাউসে যাইনি। তবে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে কফি হাউসের যে ছবিটা গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদার গীতিকবিতায় তুলে ধরেছেন, সেটা এক কথায় অসাধারণ। আর তার ওপর নচিকেতার ছেলে খোকা সুন্দর সুর করেছেন। আমি তো কেবল তাঁদের বানানো জিনিসটাই শ্রোতার কাছে তুলে ধরেছি। সব কৃতিত্ব গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের।’
মান্না দে’র কণ্ঠের তারুণ্য ধরে রাখার রহস্যটা কী? বললেন, ‘এটা স্বতন্ত্র উপস্থাপন, স্বতন্ত্র মনোভাবের বিষয়। আমি একটি সাধারণ গৃহস্থঘরের ছেলে। সেভাবেই মানুষ হয়েছি, লেখাপড়া করেছি, সেভাবেই জীবনকে দেখতে ও চলতে শিখেছি। তবে এটা ঠিক, কারও মধ্যে যদি প্রতিভা থাকে, তবে সে কিছু হতে পারবে। আমার কাকা আমার ভেতর হয়তো সে রকম প্রতিভা দেখেছিলেন। তিনিই আমাকে টেনে এনে একদিন বলেছিলেন, ‘গান শেখো।’ গানের জগতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনিই আমাকে রাস্তা দেখিয়েছিলেন। সে জন্য হয়তো আজও গাইছি।’
মান্না দের কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন অন্ধ। সব সময় তাঁর সঙ্গে একজনকে থাকতে হতো। এ কারণেই কাকার সঙ্গে মান্না দের কলকাতা থেকে মুম্বাই যাওয়া। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন ছিলেন। মান্না দে বলেন, ‘কাকাই ছিলেন আমার সংগীত ভুবনের পথপ্রদর্শক। তিনি শিখিয়েছেন কী করে গান করতে হয়, সুর বাঁধতে হয়। ভীষণ বাস্তববাদী মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর মতো করেই আমি জীবনটাকে দেখতে শিখেছিলাম। কাকা সব সময় বলতেন, কান দুটো খোলা রাখবি। ভালো-মন্দ দুটোই শুনবি। তা না হলে কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ সেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবি না।’
মান্না দে’র ভালোবাসার গানে ভালোবাসা যেন উপচে পড়ে। আবার বিরহের গান শুনে শ্রোতাও বিরহকাতর হয়ে যান। মান্না দে’র উত্তর, ‘যারাই গান করবেন, তারা যদি গানটাকে বুঝে করেন, তবেই একটা ফল পাবেন। মানে গানের ভাষার মধ্যে কবি কী বলতে চেয়েছেন, কীভাবে সুর করা হয়েছে, কেমন গায়কি দিয়ে গাইলে সেটা একটা আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি, সারেগামাপাধানিসা কিংবা ধাগেনাতি নাগেধিনা, ধাগিনা নাতিনা-এগুলো ভালো করে না জানলে ভালো করে গান করা যায় না।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ছিল মান্না দের দারুণ প্রিয়। বললেন, ‘আমার কাছে রবীন্দ্রনাথের সব গান স্বরলিপিসহ আছে। আমি বাড়িতে রবীন্দ্রসংগীত করি। আমি তো বলব, ও রকম সুর পৃথিবীতে কেউ করতে পারবে না। গানের কথা ও সুরের এত আত্মীয়তা! গাইতে বসলেই অবাক হই।’
বাংলাদেশ সম্পর্কে মান্নার অনুভূতি, ‘বাংলাদেশকে আমি ভালো করে চিনিনি। তবে শুনেছি, এখানকার শ্রোতারা কলকাতার বাংলা গান খুব শোনে, সেটাকে আমি খুব তারিফ করি। তা ছাড়া বাংলাদেশে বাউল, ঠুমরি, খেয়াল, কীর্তন, ভাটিয়ালি—কী নেই! এই গানগুলো যখন শুনি বা করতে বসি, তখন আমার মনে হয়, এই গান-বাজনার জগৎ দুটো এক হয়ে গেলে ভালো হয় না!’