মাদার্স ডে’কে কমপ্লিমেন্ট করার জন্য বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফাদার্স ডে’র উৎপত্তি। শুরুটা ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের স্পোকেইন শহরে। আমেরিকান সিভিল ওয়ার ভেটেরান উইলিয়াম জেকসন স্মার্টের কন্যা সনোরা স্মার্ট ডড ইয়াংম্যান ক্রিশ্চিয়ান এসোসিয়েশন (YMCA) হতে লঞ্চ করেন এই প্রকল্প। প্রথমে জনপ্রিয়তা না পেলেও আজকের বিশ্বের অনেক দেশে দিনটি ব্যাপক আয়োজনে পালন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর অন্যতম। বাংলাদেশেও দিন দিন এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ব্যাপক ভাবে না হলেও দেশের সোস্যাল মিডিয়ায় দিনটার সিগ্নিফিকেনস চোখে পরার মত। উপলক্ষ বানিয়ে মা-বাবাকে ধন্যবাদ জানানোর সংস্কৃতি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি নয়। সহজেই অনুমেয় এর আগমন পশ্চিম হতে। শিল্পোন্নত পশ্চিম দুনিয়ায় ১৮ বছর হলেই মা-বাবা যেমন সন্তানকে বাড়ি হতে বিদায় করে দেয়া হয় পাশাপাশি সন্তানও বাড়ি ছাড়ার তাগাদা অনুভব করে। এভাবেই সৃষ্টি হয় দূরত্ব, যা পরিবারের সদস্যারা বাকি জীবনের কোনোদিনই অতিক্রম করতে পারেনা। তার কারণও বিভিন্ন; প্রথমত, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, দ্বিতীয়ত, ভাগ্য গড়ার অন্বেষণ, বিয়ে ও নিজস্ব সন্তানাদি নিয়ে জীবন যুদ্ধের বাস্তবতা। ১৮ বছর হতে মৃত্যু পর্যন্ত পশ্চিমাদের অনেকেই মা-বাবাকে দ্বিতীয় বারের মত দেখতে ফিরে যায়না আপন শহরে। মা-বাবা নিজেও প্রেম-ভালবাসার ভেলায় ভেসে চলে যায় এক বন্দর হতে অন্য বন্দরে। এভাবেই ফিকে হয়ে আসে মা-বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন টান। মার্কিনিরা সময় মতোই আবিস্কার করেছিল মা/বাবা দিবস। ভুলে যাওয়া মা/বাবাকে ফুল, শুভেচছা কার্ড অথবা ফোন করে একদিনের জন্য হলেও মনে করিয়ে দেয় সন্তানের উপস্থিতি। রিটায়ারমেন্ট হাউসের অফুরন্ত অবসরে মার জন্য এটাই চরম ও একমাত্র পাওয়াা। একই কথা প্রযোজ্য বাবাদের বেলায়। এসব স্মৃতি নিয়েই ওরা পরলোকে পাড়ি দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাকে প্রতিবছর ২২ জুলাই ‘বিশ্ব বাবা-মা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে আজ বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় দু’জন মানুষকে একসঙ্গে স্মরণের অভূতপূর্ব উপলক্ষ এটি। শুভেচ্ছা কার্ড, ফুল, চকলেট, পুরনো দিনের স্মৃতিময় এ্যালবাম ও প্রিয় খাবারসহ নানা উপহারে ভরে যাবে বাবা ও মায়েদের ঘর। কিন্তু সন্তান থেকেও তাদের সান্নিধ্য পাবেন না বৃদ্ধ নিবাসের বাবা ও মায়েরা। আসবে না কেক, চকলেট। বাংলাদেশে প্রবীণদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টারের (রিক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ প্রবীণ। এই প্রবীণদের মধ্যে কতজন বৃদ্ধাশ্রমে আছেন তার সঠিক তথ্য সরকারি দফতরগুলোতেও নেই। তবে দিনকে দিন সে সংখ্যা বাড়ছে বলেই অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধীরে ধীরে আমাদের একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হচ্ছে পারিবারিক বন্ধনের মমত্ববোধ। ফলে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বাড়ছে। নবীন প্রজন্মের এ কথা মনে রাখা জরুরি যে, তারাও একদিন বৃদ্ধ হবে। প্রকৃত অর্থে, মা-বাবার সাথে আমাদের সম্পর্কটা চীর জনমের। প্রতিটা দিন আমাদের জন্য মা-বাবা দিবস। স্ত্রী/স্বামীদের চক্করে আটকে আমরা অনেক সময় ভুলে যাই মা-বাবা একটাই। এ সম্পর্ক কাগজের নয়, বরং নাড়ির, আত্মার ও রক্তের।