টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় প্রথম সেমিফাইনাল একে-অপরের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। সুপার টেনের চার ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে ইংলিশরা। আর চার ম্যাচের সবটিতেই জয় পায় কিউইরা।
গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ড রানাআপ। আর নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন। গ্রুপপর্বের বিচারে নিউজিল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও বেশ কিছু কারণে শেষ চারের লড়াইয়ে জিতবে ইংল্যান্ড।
প্রথম চার ম্যাচের চারটিতে জিতলেও কোনো ম্যাচেই তেমন পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। টুর্নামেন্টে উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের বিরুদ্ধে জয় পায় কিউইরা। সেখানে বড় জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডকে কৃতিত্ব চেয়ে ভারতের ভুলও কম কাজ করেনি ম্যাচে।
স্পিন সহায়ক পিচ বানিয়েও মাত্র একজন স্পিনারের পাশে তিন ফাস্ট বোলার খেলিয়ে নিজেদের ফাঁদে নিজেরাই আটকে গেছে ভারত। যেখানে পেস নির্ভর নিউজিল্যান্ড ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির মতো পেসারকে বসিয়ে তিন স্পিনার নিয়ে লো স্কোরের(১২৬) ম্যাচ জিতে যায় ৪৭ রানের বড় ব্যবধানে।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পায় নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে অজিরা প্রবল প্রতিপক্ষ হলেও টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে এখনো নিজেদের তেমনটা প্রমাণ করতে পারেনি। তার উপর এই বিশ্বকাপে যে দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ভারতে এসেছে সেটা তাদের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক জমানার অন্যতম দুর্বল দল। মিচেল জনসনের অবসরের পর ইনজুরির কারণে মিচেল স্টার্কের অনুপস্থিতি অজিদের আরো বেশি দুর্বল করেছে।
গ্রুপপর্বের তৃতীয় ম্যাচে কিউইদের জয়টা পাকিস্তানের বিপক্ষে। টি-টুয়েন্টিতে শক্তিশালী হলেও এবার পাকিস্তানকে নিয়ে তেমনটা ভাবেননি কেউই। দুবাইতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার, এরপর নিউজিল্যান্ডে গিয়ে একই দশা হওয়া পাকিস্তানের বাজে ফর্ম অব্যাহত ছিল বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপেও।
ফর্ম আর দলীয় শক্তির বিচারের বাইরে সব সময়ই আনপ্রেডিক্টবল পাকিস্তান দল। ম্যাচে ভালো ক্লিক করলে জিতবে, নয়তো বাজেভাবে হারবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তেমনটাই হয়েছে পাকিস্তানের।
আর শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে রানারআপ হওয়ার পর বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দুরন্ত খেলা বাংলাদেশ বড় একটি দুঃসংবাদ নিয়ে খেলতে নামে সুপার টেনে। দলের বোলিংয়ের অন্যতম ভরসা পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানিকে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের দায়ে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। যেটাকে ‘অবিচার’ হিসেবেই দেখছে দলের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সমর্থকরা।
ম্যাচে বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে কোণঠাসা করতে পারলেও ব্যাটিংয়ে সুবিধে করতে পারেনি মানসিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ। সে হিসেবে গ্রুপপর্বের চার ম্যাচে তেমন কোনো পরীক্ষার মুখেই পড়তে হয়নি কেন উইলিয়ামসনের দলকে।
বিপরীতে বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মিশ্র অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের পর সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ইংলিশরা। রেকর্ড ২৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জেতান ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডকে যেমন ব্যাটসম্যানরা জিতিয়েছেন। তেমনি বোলাররাও দলকে জিতিয়েছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বিপদেই পড়েছিল ইংল্যান্ড। বোলারদের কল্যাণে সেই লো স্কোরিং ম্যাচ জিতে নেয় ইয়ন মরগানের দল। আর শেষ ম্যাচে বর্তমান শ্রীলঙ্কাকে তেমন কোনো প্রতিরোধই গড়তে দেয়নি ইংলিশরা।
আজকের ম্যাচে আরো একটা জায়গায় এগিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় এরই মধ্যে দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে তারা। যার কারণে কোটলার পিচ সম্পর্কে প্রতিপক্ষের চেয়ে একটু বেশিই চেনা ইংলিশদের কাছে।
নিউজিল্যান্ডের স্পিনাররা এই টুর্নামেন্টে বেশ ভালো বোলিং করেছে। ভারতের মতো ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধে সাফল্য পেয়েছে তারা। কোটলার পিচ ঐতিহাসিকভাবে তেমন ফাস্ট না। স্পিনাররা বেশ সাফল্য পেয়েছেন এখানে। তবে পেসাররাও ভালো বাউন্স পান।
অনেকেরই ধারণা দিল্লিতে আজকে ম্যাচে ঘূর্ণি পিচই থাকবে। আর তাতে বিপদে পড়তে পারে ইংল্যান্ড। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, আফগানিস্তানের পর শ্রীলঙ্কার মতো স্পিন শক্তির বিপক্ষে পরীক্ষায় পাশ করে এসেছে ইংলিশরা।