চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আগে টাকা পরে পরীক্ষা!

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার কষ্টাপাড়া আলীম মাদ্রাসার ২৩জন শিক্ষার্থী এবার
আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এজন্যে সরকারের নির্ধারিত ১৪১৫ টাকাসহ অতিরিক্ত
৭শ থেকে ৯শ টাকা বেশি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের রশিদে ফরম পূরণ করেছে তারা।

পরীক্ষার দিনক্ষণ ধার্য হলেও তাদের হাতে আসে না পরীক্ষার প্রবেশপত্র। এনিয়ে
ওই ২৩জন পরীক্ষার্থী চরম উৎকন্ঠায় থেকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের সাথে
যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কেন্দ্র ফি বাবধ অতিরিক্ত আরো ৩২৫ টাকা দিতে হবে।
পরীক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে অধ্যক্ষ প্রবেশপত্র না দিয়ে তাদের সাফ জানিয়ে দেন, ‘আগে টাকা পরে পরীক্ষা’।

রবিবার পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত যার যার অবস্থানে অনড় থাকেন অধ্যক্ষ ও পরীক্ষার্থীরা। পরে পরীক্ষা শুরুর ২ মিনিট আগে সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে প্রবেশপত্র বিতরণ করেন অধ্যক্ষ।

জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার কষ্টাপাড়া আলীম মাদ্রাসার ২৩জন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ১২ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে নোটিশ দিয়ে ফরম পূরনের জন্য জানানো হয়।

নোটিশে বোর্ড ফি ১৪১৫ টাকা কেন্দ্র ফি ৩৫০ টাকা, নৈমত্তিক ফি ৩০০ টাকা, সেশন ফি ৩০০ টাকা, যাতায়াত ফি ৩০০ টাকা, দরিদ্র ফি ২০০ টাকা, কোচিং ফি ২০০ টাকা, নির্মাণ ফি ২০০ টাকা এবং অন্যান্য ফি ৫০০ টাকাসহ মোট ৩৭৭৫ ধার্য করা হয়।

এতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে পরে তা কেন্দ্র ফিসহ ২৩০০ টাকা নির্ধারিত হয়। দু’একজন দরিদ্র শিক্ষার্থী ব্যতিত সকলেই প্রতিষ্ঠানের রশিদে ২৩০০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করে।

এবিষয়ে পরীক্ষার্থী খালেক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘মাদ্রাসায় যারা পড়াশুনা করে তারা অধিকাংশই দরিদ্র। আমাদের ভর্তি করানোর সময় বলা হয়েছিলো বোর্ড ফি ছাড়া অন্য কোন ফি নেয়া হবে না। কিন্তু এই সুপার নানা অজুহাতেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছে’।

পরীক্ষার্থী হাজেরা খাতুন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘যে শিক্ষক উপবৃত্তির তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য ৪’শ করে টাকা নেয় সে কি কেন্দ্র ফি ছাড়াই ফরম ফিলাপ করতে দিছে? আমরা কেন্দ্র ফি সহ ২৩’শ টাকা দিয়েছি ফরম ফিলাপের জন্য। এখন আবার কেন্দ্র ফি বাবদ টাকা চাচ্ছে। পরীক্ষা শুরুর ১৫মিনিট আগে ওএমআর শিট হাতে পাবার কথা সেখানে ২মিনিট আগে পেলাম প্রবেশপত্র! এই মূল্যবান সময়টুকোর দায় কে নিবে? ওনাকে শিক্ষক বলতেও লজ্জা হচ্ছে’।

পরীক্ষার্থী সুজন বলেন, পরীক্ষার আগে যেমন সময় নষ্ট হয়েছে তেমনি পরীক্ষা শেষে হবার আগেও আমাদের অনেক সময় নষ্ট করেছে। সুপার ও একজন অফিসার এসে আমাদের দাঁড় করিয়ে বলছে পরের পরীক্ষায় রশিদ দেখাতে হবে নয়তো টাকা দিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।

এবিষয়ে পরীক্ষার শুরুতে কষ্টাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ্য আব্দুছ সাত্তারের সাথে কথা বলতে চাইলে ওই বিষয়ে কোন উত্তর না দিয়ে তিনি ‘অধ্যক্ষ নন’ বলে পাশ কাটিয়ে যান।

পরে তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “ভাই কিছু লেখা-লেখি করিয়েন না। একসাথে বসে চা-টা খাবোনি। বুঝেনি’ত লাম-ছাম কিছু নিয়ে খরচ চালাতে হয়”।

মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি তারা মৃধা বলেন, উপবৃত্তি বাবদ টাকা নেয়া ও পরীক্ষার্থীদের এই সকল সমস্যার কথা সভাপতি হিসেবে অধ্যক্ষ আমাকে কিছুই জানায়নি। সভাপতি হিসেবে আমি ওই প্রতিষ্ঠানের কিছুই জানিনা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল আওয়াল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন ঘটনাটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।