চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘আগে আয় পরে কর’ নীতি চান ব্যবসায়ীরা

ব্যবসা-বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে ‘আগে আয় পরে কর’ নীতি চান ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, আগে নিরাপদে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। ব্যবসাবান্ধব আইন করতে হবে। তারপর কর আদায় করা যাবে। কিন্তু ব্যবসা করার আগেই যদি করের বিষয় আসে তাহলে ব্যবসায়ীরা কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবে?

রাজধানীর মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই কার্যালয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রণিত ‘নতুন আয়কর আইন প্রণয়ন’ নিয়ে মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য পারভেজ ইকবাল, কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য আবদুর রাজ্জাক, এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ ও বিভিন্ন চেম্বার এবং অ্যাসোসিশনের শীর্ষ নেতারা।

মুক্ত আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন: বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে ব্যবসায়ীরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় কর দিতে চায়। তবে কোন রকমের হয়রানি করা যাবে না। ব্যবসা করে আগে আয় করতে হবে তারপর আয়কর পরিশোধ করা যাবে। এই জন্য ‘আগে আয় পরে কর নীতি’ থাকা দরকার।

শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন: শিল্পের মৌলিক কাচাঁমালের উপরে ৫ শতাংশ অগ্রীম আয়কর আদায় করা হয়। যা আয়কর আইনের মূলনীতির পরিপন্থী। ব্যবসা-বান্ধব আয়কর আইন প্রণয়ন করতে হলে এ ধরনের বিধান আইনে থাকা উচিত নয়। আগে আয় করতে হবে তারপর কর।

আয়করের ক্ষেত্রে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াতে নতুন নতুন করদাতাকে করের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন: বর্তমানে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ১০ শতাংশের মত এবং ইটিআইএন ধারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ ৩৬ হাজার। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করে প্রায় ১৬ লাখ। যা মোটেও আশানুরুপ নয়। আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়লে বর্তমানে যারা কর দিচ্ছে তাদের উপরে অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।তিনি বলেন: বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ কে ভিত্তি ধরে নতুন আয়কর আইনে ভাষাগুলো সহজ, সাবলীল করা দরকার। যাতে আইনটি সকলের নিকট সহজবোধ্য হয়।

কর আদায়কারী কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোর দাবি জানিয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন: কর নির্ধারন বা এ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অধিক ক্ষমতা থাকার কারণে করদাতারা হয়রানির শিকার হন। তাদের ক্ষমতা কমিয়ে এনে আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতে আপীল করার আগে বিরোধীয় করের ২৫ শতাংশ পরিশোধের বর্তমান আইনের বাধ্যবাধকতা নতুন আইনে না রাখাই সমীচীন।

এ সময় তিনি নতুন আয়কর আইনের খসড়া প্রণয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এফবিসিসিআইর মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান।

মুক্ত আলোচনার পর ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নজিবুর রহমান বলেন: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নতুন আয়কর আইন প্রণীত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে বুঝতে পারে সেজন্য যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আয়কর আইন বাংলায় প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমবে। কারণ এই আইন প্রয়োগে স্মার্ট টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে।তিনি বলেন: ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে এনবিআর এখন শুধু কথায় নয় বাস্তবিক কাজ করে যাচ্ছে। তবে রাজস্ব কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন স্থানে আয়কর আদায়ে যায়। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। এই বিষয়টি আপনাদের বিবেচনা করতে হবে। সবাইকে একসাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।

৮ নভেম্বর সর্বোচ্চ করদাতাদের সম্মাননা দেয়া হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন: এই প্রথমবারের মতো নতুন একটি সম্মাননার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘কর বাহাদুর পরিবার’। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে যে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা সবাই আয়কর দিচ্ছে তাদের এই বিশেষ সম্মননা দেয়া হবে।

নজিবুর রহমান বলেন: যারা বেশি কর দেন তাদের একটি ট্যাক্স কার্ড দেয়া হবে এবং গাড়িতে বা অফিসের সামনে ব্যবহারের জন্য দেয়া হবে বিশেষ স্টিকার। ওইসব ট্যাক্স কার্ড বা স্টিকারে লেখা থাকবে ‘আমি একজন সম্মানিত করদাতা’। করদাতারা যাতে সব জায়গায় সম্মান পান, সেই উদ্দেশে এই বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।