সম্প্রতি নরওয়ের ট্রুন্ডহিমে স্টারমাস সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে পদার্থবিদ ও কসমোলজিস্ট স্টিফেন হকিং বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই ছাড়তে হবে পৃথিবী। চাঁদ অথবা মঙ্গলে গড়তে হবে সভ্যতা। হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। এখানে জায়গাটা খুব দ্রুত ছোট হয়ে আসছে। টিকে থাকার জন্য যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ দরকার, তা খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে আসছে উদ্বেগজনক হারে।
খুব দ্রুতই বোধহয় আমাদের পৃথিবীর সময় শেষ হয়ে আসছে, পৃথিবী ছেড়ে দিতে হবে, ছেড়ে দিতে হবে পৃথিবীর সুখদুঃখ, মায়া মোহ সব। ধ্বংস অনিবার্য পৃথিবীর! সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত! চাঁদ আর মঙ্গলই হবে আমাদের ‘নেক্সট ডেস্টিনেশন’! যদি মহাকাশে থাকার জায়গা খুঁজে না পাওয়া যায় তবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
হকিং বলেছেন, ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আর খুব বেশি দেরি নেই। আমাদের এই গ্রহের খুব কাছে থাকা (নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট) গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড একের পর এক আছড়ে পড়তে চলেছে পৃথিবীর ওপর। এই পৃথিবীটাকে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার রাস্তাগুলো আমরাই এতদিন ধরে তৈরি করেছি। পৃথিবীর ‘জ্বর’ বাড়ছে লাফিয়ে। দুই মেরুর বরফ গলে যাচ্ছে অসম্ভব দ্রুত হারে। বসতি গড়তে যথেচ্ছ বন কেটে ‘নির্বংশ’ করছি গাছপালা। তাতে হইহই করে ভেঙে পড়ছে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র। বহু প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ। এটা কোনো সায়েন্স ফিকশন নয়। সায়েন্স ফ্যাক্টস বা বৈজ্ঞানিক সত্য। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম ও সূত্র সেটাই বলছে।’
হকিংয়ের মতে, এর আগে যখনই সভ্যতা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, বেঁচে থাকা, মাথা গোঁজার জায়গাটা যখন সংকুচিত হয়ে এসেছে মানবসভ্যতার সামনে, তখনই সে নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার করে নিয়েছে। ১৪৯২ সালে এইভাবেই আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন কলম্বাস। কিন্তু পৃথিবীতে আর তেমন কোনো জায়গা পড়ে নেই, যেখানে গিয়ে এই সভ্যতা বেঁচে থাকতে, টিঁকে যেতে পারবে। এখানে আমাদের জায়গাটা ছোট হতে হতে পুরোটাই ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই যেতে হবে অন্যগ্রহে।
হকিংয়ের মতে, প্রথমে চাঁদে। তার পর ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে। টার্গেট রাখতে হবে যাতে ৩০ বছরের মধ্যেই চাঁদে গড়ে তোলা যায় সভ্যতার পরবর্তী উপনিবেশ। আর ৫০ বছরের মধ্যেই উপনিবেশ গড়ে তুলতে হবে, তুলতেই হবে মঙ্গলে। ওই দুই ভিন জগতে গিয়ে আমাদের নতুন করে ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, সব প্রাণী, উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, শৈবাল, ছত্রাক, পতঙ্গদের নিয়ে।