ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর প্রতি ‘ক্ষুদ্ধ, আক্রমণাত্মক’ বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কানাডায় জি-৭ সম্মেলন শেষ করার কয়েক ঘন্টা পরেই এমন মনোভাব জানান ট্রাম্প। টুইটারে সক্রিয় ট্রাম্প এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি টুইট করেন।
সম্মেলন শেষে নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সাথে ঐতিহাসিক বৈঠকের উদ্দেশ্যে এখন সিঙ্গাপুরে রয়েছেন ট্রাম্প। ১২ জুনের সেই বৈঠককে সামনে রেখে আজ সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েন লুংযের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন তিনি।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধানদের জি-৭ সম্মেলনের আয়োজক রাষ্ট্র কানাডার বিরুদ্ধে অসততার অভিযোগ এনে সম্মেলন শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতি থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প বলেন, উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটের (ন্যাটো) প্রায় সম্পূর্ণ খরচই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বহন করে। আর এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সেই দেশগুলোর সুরক্ষা করছে, যে দেশগুলো বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারিত করছে, বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
‘ন্যায্য বাণিজ্যকে এখন নির্বোধের বাণিজ্য বলতে হবে।’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের উপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকির প্রেক্ষীতে ট্রাম্প এমনটি বলেন।
জি-৭ সম্মেলনের কয়েকদিন আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা জানায় দেশগুলো।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল রোববার বলেন, তার (ট্রাম্পের) এই ভিন্ন অবস্থান নেওয়াটা ‘রক্ষণাত্মক ও কিছুটা হতাশাজনক’। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোও ট্রাম্পের এই ধরণের আক্রমণাত্মক আচরণের নিন্দা জানান।
এর আগে, জি-৭ সম্মেলন শেষে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। ট্রুডোকে টুইটে ‘খুবই অসৎ ও দুর্বল’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জি-৭ সম্মেলনের সম্মেলন শেষে যৌথ প্রজ্ঞাপনে দেশগুলো ‘নিয়মতান্ত্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থা’র পক্ষে বিবৃতি দেয়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের নাম সেখানে ছিল। কিন্তু ওই প্রজ্ঞাপন ইস্যু হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ট্রাম্প ঘোষিত শুল্কের জবাবে ১ জুলাই থেকে পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে তার দেশ। এরপরই যৌথ বিবৃতি থেকে নাম সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ন্যাটোর অন্যান্য সদস্য দেশের তুলনায় আমেরিকা অনেক বেশি খরচ বহন করে।
“তারা ব্যয়ের মাত্র একটি সামান্য অংশ বহন করে” উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আন্তর্জাতিক সামরিক জোটের অর্থায়নে সাহায্য করতে ইউরোপিয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আরও বেশি অর্থ দিতে হবে।
ট্রাম্প বলেন, ইউরোপকে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘অন্যায্য আঘাত’ পেতে হচ্ছে।
“পরিবর্তন আসছে।” বলেও হুমকি দেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ট্রুডোর মিথ্যা বিবৃতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র যৌথ বিবৃতি প্রত্যাখান করেছে। বলেন, বাস্তবতা হলো কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক, শ্রমিক ও কোম্পানিগুলোর উপর অত্যধিক শুল্ক ধার্য করছে।
ট্রুডো অবশ্য সেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে নতুন শুল্ক আরোপকে যুক্তিযুক্ত করার জন্য ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের অজুহাত কানাডার জন্য ‘অপমানজনক’।
“কানাডিয়ানরা বিনয়ী এবং যুক্তিবাদী। কিন্তু আমরা কখনোই কারও জোরাজুরি মেনে নেবো না”, বলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, আমরাও পাল্টা পদক্ষেপ নেবো।