দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি উপপ্রধানমন্ত্রী করে হঠাৎ সৃষ্ট সংকট সমাধানের কথা আলোচনা হচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগে। তবে সরকার ব্যবস্থায় নতুন করে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি এবং তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে দু’ ধরণের মত আছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৈয়দ আশরাফকে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেছেন। ওই বৈঠকের বিষয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগের কেউ কিছু না বললেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার লন্ডনযাত্রা আপাতত: পিছিয়েছেন। আজ বুধবারই তার লন্ডন যাওয়ার কথা ছিলো।
সরকার এবং আওয়ামী লীগে একাধিক সূত্র বলছে, দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের যে কোনো একটি বেছে নিতে বলার পাশাপাশি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দলের মতো সরকারেও এমন অবস্থানের কথা বলা হয়েছে যেখানে প্রধানমন্ত্রীর পরেই হবে তার অবস্থান।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন ইঙ্গিতে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি নিয়ে যে আলোচনা তাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দু’ ধরণের কথাই বলেছেন। এর ফলে দেশ লাভবান হবে এমনটা যেমন অনেকে বলছেন, তেমন অপব্যয়ের আশঙ্কাও করছেন অন্যরা।
দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, উপপ্রধানমন্ত্রী নামে কোনো পদ আমাদের সংবিধানে নেই। এমন কোনো মন্ত্রিত্বের উল্লেখও নেই সংবিধানে। তবে সরকার চাইলে নিশ্চয়ই সেটা করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সেটা নিশ্চয়ই খুব জটিল কিছু হবে না।
একই কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ‘প্রধানমন্ত্রী অভিপ্রায় জানালে সেটা হতে আর কতো সময় লাগবে,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন: নতুন পদ তৈরি করতে বা সংবিধান সংশোধনে বেশি সময় হয়তো লাগবে না, কিন্তু কাজটি অনেক বুঝেশুনে করা উচিত। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে অনেকবার পরিবর্তন হয়েছে। সেটা অনেকসময় ব্যক্তিস্বার্থকেই পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। তবে আমার মনে হয় সংবিধানে সংশোধন আনতে হলে অনেক ভেবে-চিন্তে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অলঙ্কারিক একটি পদ দেশের জন্য লাভজনক নয়, বরং ক্ষতিকরই হয়ে উঠবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবে চিন্তে। কিন্তু যদি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ই, তা হলে সেটা ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে আশা করেন তিনি।
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উপর অনেক দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীর পদটাতে যিনিই অধিষ্ঠিত থাকুন না কেনো, তিনি একসঙ্গে সরকারপ্রধান, অন্যদিকে দলীয় প্রধান আবার একইসঙ্গে সংসদ প্রধানও। এতোসব দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করা নিশ্চয়ই কষ্টকর। দায়িত্ব বণ্টন করলে প্রধানমন্ত্রী কাজের আরো সুযোগ পাবেন। সেটাতো অবশ্যই দেশের জন্য ভালো কিছু হওয়ার কথা,’ বলে মনে করেন সুজন সম্পাদক।
অবশ্য এ কথার সঙ্গে একমত নন শ্যামল দত্ত। যেহেতু দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র তাই সেখানে আর এমন পদের দরকার নেই বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন: রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় যেমন উপ-রাষ্ট্রপতির কোনো আলাদা কাজ ছিলো না, এক্ষেত্রেও সেটাই হবে। এর ফলে আরো নতুন অনেক পদের সৃষ্টি হবে। খরচও বাড়বে। ফলে সেটা দেশের জন্য লাভজনক হয়ে উঠবে না মোটেও।
যেখানে প্রধানমন্ত্রী আছেন সেখানে এমন পদের কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলেও মনে করেন না শ্যামল দত্ত। ‘একজন প্রধানমন্ত্রীই দেশ পরিচালনার জন্য যথেষ্ট। তাই নতুন আলোচিত এই পদটি বাহুল্য,’ বলে মন্তব্য তার।
নতুন করে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ তৈরি নিয়ে ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই ধরনের মনোভাবের মতো ওই পদ হলে তা সৈয়দ আশরাফকে দেওয়া কতোটা যুক্তিসঙ্গত হবে সে ব্যাপারেও তাদের প্রশ্ন আছে।
‘তাকে তার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হলো। তাকে আবার উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া কতোটা ঠিক হবে!,’ সেই প্রশ্ন রেখেছেন ভোরের কাগজের সম্পাদক।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন: সৈয়দ আশরাফ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের, নির্লোভ মানুষ। কিন্তু তার কর্মতৎপরতা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। এতো বড় পদের দায়িত্ব দেওয়ার আগে সবদিক ঠিকভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।