চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আইসিইউতে সংকটাপন্ন অবস্থায় বিবেক

হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ঢোকা এখন ভাত-মাছের মতো বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই-ই না তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘রোগীর গুরুতর অবস্থায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও ইনটেনসিভ কেয়ারে রোগীর স্বজন, ভিজিটর সবাই ঢুকে বসে থাকে। রাজনৈতিক নেতারাও মনে করেন, আমি না গেলে মনে হয় আমার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলাম না। রোগীরও মন খারাপ হয়।’ এতো গেল সাধারণ মানুষের কথা। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি আরো খারাপ। এ নিয়ে নিজেকেও বলতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমালোচনা করে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রোগী হলেই তাকে দেখতে যেতে হবে সবাইকে। আর মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর তো যেতেই হবে। না গেলে প্রধানমন্ত্রীরও ইজ্জত থাকে না, রোগী আর রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরও ইজ্জত থাকে না।’ এমন পরিস্থিতিতে রোগীর গুরুতর অবস্থায় আইসিইউ এবং সিসিইউতে দর্শনার্থী প্রবেশের ব্যাপারে চিকিৎসকদের কঠোর হতে বলেছেন তিনি। রাজধানীতে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ভিজিটর’স কর্নার, ডিজিটাল সিস্টেম, কাচ দিয়ে আলাদা জায়গাসহ কয়েকটি বিকল্প উপায়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এখন ক্রিটিক্যাল রোগী দেখতে গেলে কাচের বাইরে থেকে দেখেন তিনি। কতটা বাধ্য হলে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে হয়? আমরা জানি, গুরুতর বা সাধারণ অসুস্থতায় চিকিৎসার পাশাপাশি একজন রোগীর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশ। কিন্তু সেই পরিবেশ আমরা কতটা নিশ্চিত করতে পারি? হাসপাতালগুলো হাজারো নিয়ম, নিষেধ আর বারণের পরও দর্শনার্থীদের চাপ কোনোভাবেই কমানো যায় না। যদিও তারা জানেন, এতে রোগীর পাশাপাশি নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেন না তারা। স্বাভাবিক নিয়মে যেতে না পারলে উৎকোচ, প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করেও তারা হাসপাতালে প্রবেশ করেন। মাঝে মধ্যে কড়াকড়ির কারণে দর্শনার্থীদের স্রোত কিছুটা কমানো গেলেও কিছুদিন পর আবারো সেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তাহলে আমাদের বিবেকই যখন আইসিইউতে সংকটাপন্ন রোগীর মতো অবস্থায় তখন এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী? প্রধানমন্ত্রী তো চিকিৎসকদের বলেই দিয়েছেন, ‘দরকার হলে আমার নাম ভাঙায়েন! আমি বলে যাচ্ছি।’ কিন্তু এতে কি স্থায়ী সমাধান আসবে? আমাদের মধ্যে বিবেক বোধ জাগ্রত হবে? এটা ঠিক, প্রধানমন্ত্রী বলার পর সাময়িকভাবে হয়তো পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। তবে আমরা চাই এর একটা স্থায়ী সমাধান। আর তখনই তা সম্ভব, যখন বিষয়টি নিয়ে সবাই সচেতন হবে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান আমাদের মাঝে সচেতনতার বীজ হিসেবে কাজ করবে।