সম্প্রতি সাংসদ হাজি সেলিমের পুত্র কমিশনার ইরফান সেলিম দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক। এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এই ধরণের অপরাধগুলোর বিচারকার্য দ্রুত বিচার এখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অনিবার্য হয়ে গেছে। বিশেষ করে এই ধরণের ঔদ্ধত্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, ধরাকে সরা জ্ঞান করে যত্রতত্র সাধারণ মানুষকে মারধোর নির্যাতনের বিচার এই দেশে সচারচর হয়না। হলেও খুব প্রভাবশালী বাদে কয়েকটি খুচরো অপরাধীর শাস্তি হয়। সে শাস্তিও আসলে কতদূর কার্যকর হয়েছে তাও প্রশ্নবিদ্ধ দেশের মানুষের কাছে। কিন্তু এই ঘটনাটি একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবার ১৮ মাসের সাজা হওয়ার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে গত রোববার রাতে বইপত্র কিনে মোটরসাইকেলে করে সস্ত্রীক সেনানিবাস এলাকায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খান। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে তাদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের গাড়ি। তিনি এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে কয়েকজন তার ওপর হামলা চালায়। বাধা দিতে গেলে তার স্ত্রীকেও লাঞ্ছিত করা হয়। নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা নিজেই বাদী হয়ে সোমবার সকালে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ গাড়ির ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার ও গাড়িটি জব্দ করে। হাজী সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের চকবাজার দেবিদাস ঘাট লেনের বাসভবনে অভিযান চালিয়ে গুলিভর্তি পিস্তল, ইয়াবা ও বিদেশী মদ উদ্ধার করেছে র্যাব। এর আগে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা এবং তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের মামলায় সোমবার দুপুরে ওই বাসা থেকে ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এ রায় দেয়। এখন ইরফান তার কাউন্সিলর পদও হারাতে পারেন। তার পিতা একজন প্রভাবশালী সাংসদ এবং পুরনো ঢাকার রাজনীতিবিদ। তার শ্বশুর নোয়াখালীর সাংসদ একরামুল হক চৌধুরী। কথিত আছে পিতাও শ্বশুড় উভয়েই তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার করার জন্য কুখ্যাত। এহেন কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নেই যা তারা করেনি। তাদেরই উত্তরাধিকার ইরফান সেটার প্রমাণ দিলো নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধোর করে এবং ঐ কর্মকর্তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে। ফলে পুলিশ র্যাব ও সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তারই প্রেক্ষিতে ইরফানকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আরও কার্যকর করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমরা আরও মনে করি তাৎক্ষণিক অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত বিচার আদালতকে কার্যকর করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে জনগণের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বৈ কমবে না। নতুবা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলের ভেতর এই ধরণের দুর্বৃত্তদের আগ্রাসী মনোভাব বেড়েই চলবে। ক্ষমতাসীনদের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হওয়ার হাত থেকে এইসব অপরাধীদের দল থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।