চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইরাক ও সিরিয়ায় পরাজিত হয়ে আইএসের বর্তমান ঘাঁটি এশিয়ায়?

ইরাক ও সিরিয়ায় পরাজিত হয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠি কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এখন দেশ দুইটি থেকে পলায়নরত, অভিবাসী জঙ্গিদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে কোন দেশ? রাশিয়ার গণমাধ্যম ‘আরটি’ জানিয়েছে, অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা বাহিনীর দূর্বলতার সুযোগে এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানকেই পরবর্তী ঘাটি বানাতে পারে কথিত আইএস।

রাশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফায়ার্স কাউন্সিলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিকিতা মেনকোভিচ আরটিকে জানান, কয়েক দশকের অস্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দূর্বলতা আফগানিস্তানকে আইএসের ‘সবচেয়ে সম্ভাব্য’ পরবর্তী ঠিকানা করে তুলেছে। যেহেতু সিরিয়া ও ইরাকে তারা পরাজিত হয়েছে।

রবিবার ইরাকের সরকার ঘোষণা দেয়, দেশটি সন্ত্রাসীদের থেকে ‘সম্পূর্ণ মুক্ত’ এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আর এই সপ্তাহের শুরুর দিকে রাশিয়ার জেনারেল স্টাফ বলেছেন, সিরিয়ার মাটিতে আইএসের সকল সন্ত্রাসী ইউনিটকে ধ্বংস করা হয়েছে। এই অঞ্চল এখন মুক্ত।

মেনকোভিচ বলেন, বেঁচে যাওয়া জঙ্গিরা এই দেশ দুটি থেকে পালাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আইএসের ‘সবচেয়ে সম্ভাব্য’ লক্ষ্য হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। তিনি বলেন, “ আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিতিশীলতা বিরাজমান। সরকারের নিরাপত্তা সংস্থার দূর্বলতার কারণে উচ্চমাত্রার সন্ত্রাসী কার্যক্রমও চলছে।”

কয়েক দশক ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী ও আফগান কর্তৃপক্ষের ‘ফলশূণ্য’ লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে মার্কিন সেনাদল।

বর্তমানে আফগানিস্তানের অনেক অঞ্চলে কথিত ইসলামিক স্টেটের পতাকাতলে যুদ্ধরত গ্রুপ সক্রীয় রয়েছে বলে জানান মেনকোভিচ। বলেন, এর মধ্যে রয়েছে নানগরহার প্রদেশ এবং কুন্দুজের মতো দেশটির উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা। এই সন্ত্রাসী ইউনিটগুলো অভিবাসী জঙ্গিদের সাথে সমন্বয় এবং সহযোগিতা করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, তেল থেকে আয়ের সুযোগ হারিয়েছে আইএস সন্ত্রাসীরা। এই আয় তাদের ইরাক ও সিরিয়ায় অপারেশনে অর্থায়ন করতো। আফগানিস্তানেও তারা বিভিন্ন উৎস থেকে আয় করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক পাচার, অবৈধভাবে মূল্যবান পাথর উত্তোলন এবং এই অঞ্চলের মানবিক প্রকল্পগুলো থেকে অর্থ লোপাট, পশ্চীমা পৃষ্ঠপোষকরা যেগুলোর অর্থায়ন করে।

সংবাদ সংস্থা এএফপি রবিবার জানায়, নভেম্বর মাসে, প্রায় দুইশ বিদেশী জঙ্গী, যাদের কিছু অংশ সিরিয়া থেকে এসেছে, তারা আফগানিস্তানের জোওজান প্রদেশে একটি আইএস সংশ্লিষ্ট গ্রুপে যোগ দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই সংবাদ সংস্থাকে জানায়, নতুন আসা জঙ্গিরা, যাদের অনেকেই ফ্রেঞ্চ ও আলজেরিয়ান বলে জানায় তারা, স্থানীয় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে বোমা স্থাপন ও সুইসাইড ভেস্ট এর ব্যবহার।

মেনকোভিচ বলেন, এছাড়াও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া জঙ্গি ইউনিটের লিবিয়া ও মিশরেও ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে, যেখানকার অঞ্চলগুলোতে অস্থিতিশীলতা রয়েছে। বিশেষ করে লিবিয়ায়তো মূলত গৃহযুদ্ধই চলছে। এই জঙ্গিরা আইএস সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোতে যোগ দিতে পারে।

এছাড়াও কিছু জঙ্গি দল ইউরোপিয়ান দেশগুলোতেও আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এই সন্ত্রাসী ‘জঙ্গিদের আন্ডারগ্রাউন্ড’ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারে। তারা মাদক পাচারসহ অন্যান্য অবৈধ কাজে জড়িত হতে পারে।

জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্স সবচেয়ে বেশি এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে ধারণা মেনকোভিচের। অনেক বৃহৎ ইউরোপিয়ান শহর, যা কিছুটা প্রান্তিক সেখানে যে কেউ সহজেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, এবং কর্তৃপক্ষের কোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাগজপত্র ছাড়াই বাস করতে পারে।

‘অদ্ভূত হলেও’  ইউক্রেন পলায়নরত জঙ্গিদের আকর্ষণ করতে পারে। কারণ সেখানে স্থিতিশীলতা দূর্বল। মেনকোভিচ বলেন, ইউক্রেনের উত্তরাংশে কিয়েভ সরকারের পক্ষে লড়াইরত চেচেন জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল গ্রুপগুলোর সাথে যোগ দিতে পারে এই জঙ্গিরা। সিরিয়া থেকে জঙ্গি গ্রুপের অভিবাসনের উদাহরণও রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে রাশিয়ার নাগরিকও রয়েছে, তারা ইউক্রেনের বিচার থেকে রেহাই পেতেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

তবে নির্দিষ্ট কোন ভূমিকে কেন্দ্র না করে লোন ওল্ফ হামলার দিকেও ঝুঁকছে কথিত আইএস। সম্প্রতি  ইউরোপের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার হুমকি দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে তারা। এর প্রেক্ষীতে জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারি করা ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কার্টজ বলেন, কথিত আইএসের এমন হুমকি প্রমাণ করে, তারা আরও ব্যাপক হারে লোন-ওল্ফ হামলায় ঝুঁকছে, যেহেতু তারা ইরাক ও সিরিয়ায় ভূমি হারাচ্ছে।