সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার আপিল শুনানিতে সাত বিচারপতির সবাইকে যুক্ত না করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ‘অনাস্থা জানিয়ে মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের’ কথাকে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মনে করলেও গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিবেচনায় শুনানিতে আপিল বিভাগের সকল বিচারপতিদের তিনি চাইতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির উপস্থিতিতে আপিল শুনানি করা এবং শুনানির জন্য যে সময়ের আবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল করেছেন তা কেবলই একটা অজুহাত। এটা ডিলে প্র্যাকটিসের একটা উদাহরণ। তাই অ্যাটর্নি জেনারেলের এই অজুহাত অপ্রত্যাশিত।’
ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনকারীদের পক্ষের এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘একটি মামলার শুনানিতে কয়জন বিচারপতি থাকবেন বা কয়জন বিচারপতি নিয়ে বেঞ্চ গঠিত হবে তা প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। তাই এখানে কোন কন্ডিশন দিয়ে আবেদন করলে তা সঠিক নয়।’
তবে শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিবেচনায় শুনানিতে আপিল বিভাগের সকল বিচারপতিদের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল চাইতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের কোন আবেদন থাকলে আদালতের কাছে তিনি তা করতেই পারেন। তা বিবেচনা করা একান্তই আদালতের বিষয়।’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে করা আপিলের দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয় মঙ্গলবার।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আগামি ২১ মে এবিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
মঙ্গলবার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে আপিন শুনানি নিয়ে ‘বিশেষ’ কিছু কথা হয়। তবে কি কথা হয় তা আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান এ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি জানান, ‘গত তারিখে (সোমবার) প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সব বিচারপতিকে যুক্ত করেই এ মামলাটি শুনবেন। আজকে এক পর্যায় তিনি (প্রধান বিচারপতি) বললেন, পাচঁজনই শুনবেন। তখন আমি বললাম, সবাই যদি না শুনেন, সবাইকে যদি যুক্ত না করেন তবে অনাস্থা জানাতে বাধ্য হব। হয়ত এ মামলা থেকে নিজকে প্রত্যাহার করার চিন্তাও করতে পারি। তখন প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সবাইকে নিয়ে শুনানি করতে হবে এমন শর্ত দেয়া যায় না। একজন বিচারপতি অসুস্থ থাকতে পারেন, একজন বিদেশে থাকতে পারেন। তাই সব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে আদালত চালাতে হয়।’
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
পরে সংবিধানের এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।