চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অ্যাঙ্গাস ডিটন তত্ত্বেও আছেন, মানুষের কল্যাণেও: অমর্ত্য সেন

অর্থনীতিতে এ বছর নোবেল জয় করলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যাঙ্গাস ডিটন। সমাজে ভোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কল্যাণ আনার জন্য তার বিশ্লেষণের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ওই পুরস্কার পেলেন।

বন্ধু ডিটনের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মতামত জানালেন অর্থনীতিতে আর এক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। বক্তব্যে তিনি লিখেছেন, অ্যাঙ্গাস ডিটন অর্থনীতির ডাকসাইটে পণ্ডিত। বহু বছর ধরেই তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তেমন কথা শোনাও যাচ্ছিল। এ বছর তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন, এতে আমি খুবই খুশি।

আমার খুশি হওয়ার তিনটি কারণ আছে। এক, অ্যাঙ্গাস আমার বিশেষ বন্ধু। আমরা এক সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। তাঁর সঙ্গে অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে আমি অত্যন্ত উপকৃত হয়েছি, এ জন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞও। আমার বন্ধু ও দীর্ঘ দিনের সহকর্মী, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজও অ্যাঙ্গাগাসের সঙ্গে অনেক মূল্যবান কাজ করেছেন, আমাদের তিন জনের এক সঙ্গে গবেষণার অভিজ্ঞতাও আছে। এমন একজন বন্ধুর নোবেল প্রাপ্তি আমার পক্ষে খুবই আনন্দের কারণ।

দুই, অর্থনীতির নানা দিক আছে। একটা তার তাত্ত্বিক দিক, আর একটা ফলিত বা প্রয়োগের দিক। অর্থনীতির প্রকৃতি সম্পর্কে অ্যাঙ্গাগাসের উপলব্ধি প্রগাঢ়। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তাঁর বিচার অতি সূক্ষ্ম ও যুক্তিনির্ভর। ইংরেজিতে যাকে শর্টকাট বলে, তিনি কখনও তার আশ্রয় নেননি। তাই অ্যাকাডেমিক অর্থনীতিতে তাঁর স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার পাশাপাশি তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি খুব বড় মাপের কাজ করেছেন।

তিন, মানবকল্যাণে অর্থনীতির ব্যবহারে অ্যাঙ্গাস ডিটন বরাবর বিশেষ মনোযোগ করেছেন। দারিদ্র্য যে কেবল অর্থাভাবের ব্যাপার নয়, তার চরিত্র বহুমাত্রিক, বিশেষত স্বাস্থ্যের অভাব যে তার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক, সে বিষয়ে তাঁর মূল্যবান গবেষণা আছে। দ্য গ্রেট এসকেপ নামক তাঁর সাম্প্রতিক বইটিতে অ্যাঙ্গাস আলোচনা করেছেন, মানবসমাজ কী ভাবে দারিদ্র এবং অস্বাস্থ্য থেকে মুক্তি পেয়েছে, আবার একই সঙ্গে বহু মানুষ যে আজও সেই মুক্তির শরিক হতে পারেননি তার কারণগুলিও তিনি বিশ্লেষণ করেছেন।

ভারতে এখন দারিদ্র নিয়ে নানা তর্কাতর্কি হচ্ছে। অনেকে বলছেন, দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য আলাদা করে ভাবার দরকার নেই, সবই ঠিকঠাক চলছে, এমনকি তাঁদের মতে বাচ্চাদের ওজন কম হলেও চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, তাদের স্বাস্থ্য আসলে ভাল!

অ্যাঙ্গাস ডিটন (এবং জঁ দ্রেজ) যে কাজ করেছেন, তা এই সব কুযুক্তি ধূলিসাৎ করার শক্তি রাখে। এমন এক জন অর্থনীতিবিদকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো, এটা বাস্তবিকই আনন্দের কথা।