হাত রক্ষা করেই মুক্তামনির হাতের রক্তনালির বিরল টিউমার অপসারণ করেছেন চিকিৎসকরা। সফল অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ১৫ জন বিশেষঞ্জ চিকিৎসক। দুই ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে মুক্তামনিকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। মুক্তামনি এখনও ঝুঁকিমুক্ত না হলেও সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা।
শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়। এর আগে সকাল পৌনে আটটায় মুক্তমনিকে ওটিতে নেয়া হয়।
নয় সদস্যের এ্যাসেথেসিয়ার চিকিৎসক সহ ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অস্ত্রোপচারে অংশ নেন।
মুক্তামনির মা বলেন, আমাকে বলে আম্মু যতক্ষণ পর্যন্ত আমি অজ্ঞান না হবো তুমি আর আব্বু আমার পাশে থাকবা।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়া মুক্তামনির বাবা বলেন, সারাদেশের মানুষ আমার মেয়ের দোয়া করছে বলে সবগুলো অস্ত্রোপচার সফল হচ্ছে। দেশবাসীর কাছে কামনা আমার বাচ্চাটার জন্য প্রাণ খুলে সবাই দোয়া করবেন।
অস্ত্রোপচার শেষে সংবাদ সম্মেলনে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারির সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা: সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রায় দু’ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করার পর প্রাথমিক পর্যায়ে যে কাজটি করার সেটিতে আমরা সফল হয়েছি। মুক্তামনির হাতকে রক্ষা করেই তার হাতের মাংসগুলো কেটে একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দফায় মুক্তামনির অস্ত্রোপচার লাগবে। এর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে তার চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। আগামী কয়েক দিন মুক্তামনির অবস্থা পর্যবেক্ষনে রেখে পরবর্তী করনীয় নির্ধারন করা হবে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মুক্তামনির প্রথম সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই অস্ত্রোপচারে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন, বার্ন ইউনিটের বর্তমান পরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা ছিলেন।
সাতক্ষীরার মেয়ে মুক্তামনির দেহে জন্মের দেড় বছর পর একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর সেটি গাছের গুড়ির রূপ নিয়ে বড় হতে হতে ডান হাত শরীরের চেয়ে ভারী হয়ে উঠেছে। তার এই বিরল রোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়।
১১ জুলাই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ১২ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে লিমফেটিক ম্যালফরমেশন রোগে ভুগছে মুক্তামনি। এটি একটি জন্মগত রোগ।
ছবি: সাখাওয়াত আল আমিন