চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর সব দেশের কাছেই নিরাপদ বাংলাদেশ

ক্রিকেট জায়ান্ট অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসছে ২৮ সেপ্টেম্বর, সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল হলেও হঠাৎ করে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া তাদের সফর পিছিয়ে দিয়েছে।

ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ তাদের নাগরিকদেরকে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে যে সর্তকবার্তা আর পরামর্শ দিয়ে থাকে তাতে কোথাও বাংলাদেশ নিয়ে বিন্দুমাত্র ভয়ের কিছু নেই।

একইভাবে অস্ট্রেলিয়াও তাদের নাগরিকদের যে পরামর্শ দিয়ে থাকে তাতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া কোনো জায়গায় সমস্যার কথা উল্লেখ ছিলো না। কিন্তু বাংলাদেশে ঈদের দিন অস্ট্রেলিয়ান সরকারের এক সর্তকবার্তায় ৯টি বিষয় উল্লেখ করে অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের বাংলাদেশ সফর না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকারেরর পররাষ্ট্র এবং বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত অস্থিরতা, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে হরতাল-অবরোধের কথা উল্লেখ করে সর্তকবার্তা জারি করেছে।

বনানী, বারিধারা, গুলশান এলাকার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই থেকে বাঁচতেও সাবধান করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের আইনে মাদক-দ্রব্য কেনা-বহন ও প্রকাশ্যে সেবন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের তা করতেও মানা করা হয়েছে।

আর পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ভ্রমণে সহিংসতা-অপহরণের ঝুঁকি থাকায় ওই এলাকা ভ্রমণের আগে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর মার্চ-এপ্রিলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়াসহ সব দেশ।

বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ সতর্কতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা করা ইউরোপ-কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর বিশেষ কোনো সতর্কবাণী নেই। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার পাশের দেশ নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদেরও শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য এলাকা ভ্রমণে তেমন কোনো বিশেষ সর্তকবার্তা নেই।

দেখে নেয়া যাক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে কিভাবে দেখছে:

যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রায় স্বাভাবিক দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়েছে, হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অন্যান্য কর্মসূচিতে বাংলাদেশে সহিংস ঘটনা ঘটলেও ওইসব কর্মসূচিতে ‘যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে সরাসরি লক্ষবস্তুতে পরিণত করা হয় না, এমনকি কোনো বিদেশি নাগরিককেও না’ বলে পরিস্কারভাবে উল্লেখ আছে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে পাবর্ত্য এলাকার জন্য যে সর্তকবার্তা রয়েছে তা বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগ। অস্ট্রেলিয়ান সরকার বনানী, বারিধারা, গুলশান এলাকাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেললেও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগ ওই তিন এলাকাকেই সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় তাদের নাগরিকরা ওই তিন এলাকায় থাকলে সবচেয়ে নিরাপদ থাকবেন বলেও উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ নিয়ে ওইসব বার্তা তারা সর্বশেষ আপডেট করেছে ১৭ মার্চ ২০১৫। এই সেপ্টেম্বর ২০১৫তে তারা সৌদি আরব, বুরকিনা ফাসো, লিবিয়াসহ ৬/৭টি দেশে ভ্রমণে সরাসরি সর্তক করেছে তাদের নাগরিকদের।

কানাডা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের  কারণে অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায় উল্লেখ করে কানাডিয়ানদের বাংলাদেশের স্থানীয় মিডিয়া ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লক্ষ্য করে ভ্রমণের নির্দেশ আছে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে রাজধানীর বিশেষ বিশেষ এলাকায় নিজ নিজ নিরাপত্তা জোরদার করার কথা উল্লেখ ছাড়াও ৩/৪টি জাতীয় দিবসে তাদের নাগরিকদের একটু বেশি সর্তক থাকতে বলেছে কানাডা।

তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরের সহিংসতার কথা উল্লেখ করলেও বর্তমান সময়ের জন্য বিশেষ কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারাও বনানী-বারিধারা-গুলশানকে নিরাপদ উল্লেখ করার পাশাপাশি পাবর্ত্য এলাকা ভ্রমণে সর্তক থাকতে বলেছে। কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের জন্য ট্রাভেল অ্যালার্ট সর্বশেষ আপডেট করেছে ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।

যুক্তরাজ্য
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার মতো বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণ বক্তব্য ছাড়া বিশেষ কোনো সর্তকবার্তা নেই যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে। তারাও শুধুমাত্র পার্বত্য এলাকা ভ্রমণে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্র সংক্ষেপে তুলে ধরে তারা তাদের নাগরিকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মিডিয়ায় চোখ রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

তবে তারা দুটি ভিন্ন ধরণের ঝুঁকির দিকে তাদের নাগরিকদের সর্তকতা অবলম্বন করতে বলেছে: ২৫ এপ্রিল নেপালে ভুমিকম্পের সময় ঢাকার বিভিন্ন ভবনে কম্পন অনুভূত হয়েছে, সেজন্য নিরাপদ বাসস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয়ভাবে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার আগে হাইকমিশনের পরামর্শ নিতে বলেছে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ নিরাপত্তা বার্তা আপডেট হয়েছে ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।

যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপের অন্যান্য দেশের পর্যবেক্ষণও বাংলাদেশের জন্য প্রায় একইরকম।

নিউজিল্যান্ড
অস্ট্রেলিয়ার পাশের দেশ নিউজিল্যান্ড তার নাগরিকদের শুধু বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ব্যাপক ছিলো উল্লেখ করে ভবিষ্যতে কোনো একসময় এরকম আবার হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া আছে। এছাড়া, বাংলাদেশে থাকা ও ভ্রমণে আগ্রহী নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের সাধারণ নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে পরামর্শ আছে তাদের সাধারণ অ্যালার্টে।

তারাও দেশের স্থানীয় মিডিয়ায় চোখ রাখাসহ স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসরণ করতে বলেছে। নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বাংলাদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করে আপডেট দিয়েছে।

বিসিবির অবস্থান
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নাজিমুদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, আমরা আগে থেকেই সকল গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রাখছি। আমাদের জানামতে কোনো নিরাপত্তা সমস্যা ছিলো না। সফরে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়া একসঙ্গে কাজ করছে।

‘আশা করছি দ্রুতই সমস্যা কেটে গিয়ে সফরের পরবর্তী সময় ঘোষণা করা হবে।’

তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড এরইমধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে তারা বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ‘তাই আমার আশা করছি খুব দ্রুত সমস্যা কেটে গিয়ে টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে।’

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এরইমধ্যে ঢাকায় এসেছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান শন ক্যারল।