একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী অভিনেতা ড. ইনামুল হক মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ড. ইনামুল হকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার জামাতা অভিনেতা লিটু আনাম।
তিনি বলেন, সোমবার (১১ অক্টোবর দুপুর) সাড়ে তিনটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। তার বড় ধরনের কোনো অসুস্থতা ছিলো না। বাসায় চেয়ারে বসা অবস্থাতেই তিনি মারা গেছেন।
তিনি জানান, তাৎক্ষণিক রাজধানীর ইসলামিয়া মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ইনামুল হককে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বর্তমানে ড. ইনামুল হকের মরদেহ রাজধানীর সেগুন বাগিচায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গোসলের জন্য নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে বেইলি রোডের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। দাফনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান লিটু আনাম।
ড. ইনামুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মটবী এলাকায়। ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। মানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি লাভ করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকার সময়ে দীর্ঘ ১৫ বছর রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং দুই বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডীন হিসেবে দাত্বি পালন করেন।
নটরডেম কলেজে পড়াশুনাকালীন সময়েই তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসেই ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র যাত্রা শুরু হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। এরপর এই দলের হয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরো বহু নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯৫ সালের তিনি এই দল থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। এই দলের হয়ে তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন ‘জনতার রঙ্গশালা’,‘সরমা’সহ আরো বেশ কয়েকটি নাটকে।
২০০০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইন্সটিটিউট অব ড্রামা’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ইনামুল হক অভিনীত প্রথম টিভি নাটক মোস্তফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমনী বরশীকরণ’। তার লেখা প্রথম নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’ নির্মাণ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। দেশ স্বাধীনের পর বিটিভির প্রথম নাটক ‘বাংলা আমার’ এবং একুশের প্রথম নাটক ‘মালা একশত মালঞ্চের’র তারই লেখা ছিলো। ডা. ইনামুল হক ও লাকী ইনামের বিয়ে হয় ১৯৭০ সালের ১৪ ডিসেম্বর।