কবি এস এম রইজ উদ্দিনের স্বাধীনতা পদক বাতিল হচ্ছে। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পুরস্কার ও পদক সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। নয়জন ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই তালিকায়।
তালিকা প্রকাশের পর ‘স্বাধীনতা পদক-২০২০’ নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনরা প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় এমন কিছু ব্যক্তির নাম আছে, যাদের ঠিক কী কারণে, কী অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, তা কেউ বুঝতে পারছেন না। বিভিন্ন মহল থেকে এ নিয়ে উঠেছে প্রতিবাদ। এতে শামিল হয়েছেন এর আগে একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তরাও।
পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় নাম থাকা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের পরিচয়ের সঙ্গে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি যুক্ত রয়েছে। কিন্তু তিনি আসলেই মুক্তিযোদ্ধা কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। রইজ উদ্দিন আহম্মদের দুটি কবিতা ‘চলে গেলে’ আর ‘নড়েআল হতে নড়াইল’ কবিতা (!) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। ১৩ লাইনের ‘চলে গেলে’ কবিতায় সাতটি বানান ভুল। এগুলোকে কবিতা বলতেও অনেকের আপত্তি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ইউএনডিপির দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. সেলিম জাহান তার ফেসবুকে গতকাল লিখেছেন, নিম্নে উদ্ধৃত ‘চলে গেলে’ এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এস এম রইজ উদ্দীন আহম্মদের একটি কবিতা। তার এ কাব্যকর্মটি মন্তব্যযোগ্য নয়। সুতরাং সেটা আমি করবো না। আমার জিজ্ঞাস্য, কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এ ব্যক্তিটিকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পদকের জন্যে মনোনীত করেছেন? স্বাধীনতা পদক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক। বাংলাদেশের একজন নাগরিকের জন্যে এ এক অনন্য স্বীকৃতি। এর অবমাননা করার অধিকার আমাদের কারোরই নেই।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক এবং স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গবেষক শামসুজ্জামান খান তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজ উদ্দিন, ইনি কে? চিনি না তো। কালীপদ দাসই বা কে! হায় স্বাধীনতা পুরস্কার!’
প্রখ্যাত জাদুশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল আইচ লিখেছিলেন, ‘ একাত্তরের ভয়াবহ পিশাচ শর্ষিণার ‘পীর’ আবু সালেহকে দেওয়া স্বাধীনতা ও একুশে পদক আর ২০২০ এর ‘মহাকবি’ রইজ উদ্দিনদের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নিতেই হবে। জাতীয় পাপ স্খলনের এটাই সময়। এর কোন বিকল্প নেই।’