সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির গোটাটিকর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে রক্তাক্ত হামলায় জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলামসহ ৬ ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মধ্যে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
রোববার সকালে আতিয়া মহলের ভেতরে থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সিলেট টুডে টুয়েন্টিফোর ডটকম।
শনিবার সন্ধ্যার ওই হামলার পরপরই মূলত জনশূন্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি সাংবাদিকদেরও ঘটনাস্থল ও এর আশপাশে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে।
আর যেন কোনো প্রাণহানী না ঘটে, সে জন্যই এমন কড়াকড়ি না। রোববার সকালে ঘটনাস্থল থেকে বোমার স্প্লিন্টার সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
অপারেশন টোয়ালাইট-এর ২৪ ঘণ্টা:
আতিয়া মহলকে ঘিরে শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার শুরু হওয়া ‘অপারেশন টোয়ালাইট’ ২৪ ঘণ্টা পার করেছে। সেনা বাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা ওই অভিযান পরিচালনা করছে। তাদের ধারণা আস্তানার ভেতরে কয়েকজন জঙ্গি আছে। তবে তাদের কী অবস্থা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ অভিযান চলমান রয়েছে। বাড়িটিতে বিস্ফোরক (আইইডি) পেতে রাখা হয়েছে। তাই বলা যাচ্ছে না অভিযান কখন শেষ হবে। তবে আজ রোববার সকালের মধ্যে এই অভিযান শেষ হতে পারে জানানো হলেও পরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আর কোনো খবর জানানো হয়নি।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আতিয়া মহলের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন সেনাবাহিনীর ঢাকা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফখরুল আহসান। অভিযান সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন: আমাদের অপারেশন চলমান রয়েছে। অপারেশন শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে। আপনারা জানেন, জঙ্গিরা এখানকার যে বাড়িতে আছে, তারা সংগঠিত ও যথেষ্ট শক্তিশালী। সোয়াট এসেছিল, চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু জঙ্গিরা অনেক বেশি প্রস্তুত ছিল। শুক্রবার রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিকের প্রথম প্যারা কমান্ডের অপারেশন করার সিদ্ধান্ত হয়। সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে অপারেশন শুরু হয়।
অপারেশন চলাকালে জঙ্গিরা ১০ থেকে ১২টি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জানিয়ে ওই সেনা কর্মকর্তা আরো বলেন: পাঁচতলা ওই বাড়িতে ২৯টি ফ্ল্যাট। ১৫০টি কক্ষ। পুরো ভবনে আইইডি (বিস্ফোরক) লাগানো ছিল। এ কারণে অপারেশন কখন শেষ হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
অপারেশন শুরুর পর থেকে শনিবার দিনভর থেমে থেমে গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে পরপর দুটি গুলির শব্দ শোনা যায়। বেলা দুইটার একটু পরে আবার গুলি হয়। সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার কাছে বেলা দুইটার একটু পর থেকে প্রায় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা কোনো শব্দ হয়নি। বিকেল পাঁচটা থেকে আবার গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী নিহত হন।
অপারেশন শুরু হবার পর বেলা সোয়া একটার মধ্যে ওই বাড়ির ২৮টি ফ্ল্যাটে আটকে পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করে আনেন সেনাসদস্যরা। তাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ জন শিশু। তাদের পাঠানপাড়ার একটি বাসায় রাখা হয়।
এসব ফ্ল্যাটের বসবাসকারীরা গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা থেকে আটকা ছিল। এই বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। গত শুক্রবার দিনভর সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বার বার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় পুলিশ। কিন্তু তাতে সাড়া না পেয়ে শনিবার সকাল আটটার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো।
সকালে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু হয়। পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট অভিযানে নিরাপত্তা সহায়তা করছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা মূল অভিযান চালাচ্ছেন। সকাল নয়টার দিকে অভিযান শুরুর পরপর হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি আসে। মেঘলা আকাশের কারণে এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টি থামে।
অপারেশন টোয়াইলাইট শুরুর আগে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। জনসাধারণ ও সংবাদকর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে সরে যেতে বলে পুলিশ।