অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের সুযোগ রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
এর ফলে ব্যবসায়ীরা স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন।
বুধবার অনলাইনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মমুস্তফা কামাল ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। একটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছি, অন্যটি ফেরত দিয়েছি। আর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ৮ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে ৭ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ হবে ১১৪২ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ টাকা। এর মধ্যে সরকার দিবে ১১১০ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪০১ টাকা এবং বিশ্ব ব্যাংক ও জাইকা থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৩১ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৭ টাকা।
স্বর্ণের নীতিমালার সংশোধনীতে কী আনা হয়েছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংশোধিত স্বর্ণনীতিমালার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধনীতে আছে পরিশোধিত স্বর্ণ না এনে অনেক দেশই অপরিশোধিত স্বর্ণ এনে পরিশোধিত করে। তাই দেশে স্বর্ণ পরিশোধনের জন্য আমাদের কাছে অনুমোদন চেয়েছে। এজন্য স্বর্ণ পরিশোধনে যেসব প্রয়োজনীয় জিনিস লাগবে তা বসানোর জন্য অনুমোদন চেয়েছে। এটা কোনো খারাপ কিছু না, ভালোই।
প্রস্তাবিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা -২০১৮ (সংশোধিত) কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত নীতিমালায় নতুনভাবে সরকার, স্বর্ণ ও পরিশোধনাগারের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; নীতিমালাটি সংশোধনের ফলে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কারের পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/ আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির করা সম্ভব হবে; অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ থেকে বিভিন্ন গ্রেডের স্বর্ণবার ও স্বর্ণ কয়েন উৎপাদনে পরিশোধনাগার স্থাপনের পথ সুগম হবে; স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপন ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণের লক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মানসম্মত পরিচালনা পদ্ধতি প্রণয়ন করবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।
এছাড়া, স্বর্ণমান ও বিশুদ্ধতা সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে বিএসটিআই অথবা বিএসটিআই কর্তৃক স্বীকৃত অ্যাক্রেডিটেড সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বর্ণবার রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকের অবশ্যই স্বর্ণ পরিশোধনাগার থাকতে হবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে, বিশেষ প্রয়োজনে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সরকার (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) কতিপয় ক্ষেত্রে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন/পরিববর্তন আনয়ন করতে পারবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।
অনুমোদিত ডিলার চালানভিত্তিক সম্ভাব্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনাপত্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ১৫ কার্যদিবসের পরিবর্তে ১০ কার্যদিবস করা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার কর্তৃক নিজস্ব ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে স্বর্ণালঙ্কার/স্বর্ণবার আমদানির ক্ষেত্রে জামানত প্রয়োজন হবে না মর্মে নতুন ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।
নীতিমালায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে স্বর্ণকয়েন এবং অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ সংযোজন করা হয়েছে, কর্মপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হয়েছে এবং সংশোধিত নীতিমালায় স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ এর অন্যান্য সব বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশের পূর্ত কাজের জন্য ‘পারফরম্যান্স বেইজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ প্রকল্পের কাজ ২৯০ কোটি ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৫ টাকায় তাহের ব্রাদার্সকে দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
একই প্রকল্পের কুমিল্লা অংশের পূর্ত কাজ পেয়েছে আব্দুল মোনেম ও স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চা। এ কাজে ব্যয় হবে ৫৫৬ কোটি ৫৪ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮৮৩ টাকা।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ মেশিন ট্যুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ৩২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ টাকায় ২৩ হাজার ৬৫০টি এসপিসি পোল কেনার প্রস্তাব মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পেয়েছে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য নয়টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ডেমরা পুলিশ লাইন্স এলাকায় ২০তলা ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজ ৮০ কোটি ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ২৯৭ টাকায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও অরবিটাল বাংলাদেশের জয়েন্ট ভেঞ্চারকে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে শহর এলাকায় ‘স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উন্নত জীবন ব্যবস্থা (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের আইএমসি ওয়াইডের কাছ থেকে পরামর্শক সেবা নেয়ার জন্য অতিরিক্ত ১৩ কোটি ৪ লাখ ৩ হাজার ৭২৯ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে এ প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ৫৮ কোটি ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ প্রকল্পের পূর্ত কাজ জয়েন্ট ভেঞ্জারের ভিত্তিতে এমএম বিল্ডার্স, জন্মভূমি নির্মাণ ও ওহিদুজ্জামান চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যায় ১৫১ কোটি ২২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৫৬ টাকায় টাকা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ‘ক্রস-বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ) প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ পেয়েছে জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল, ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট ও পেডেকো। এই প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ১৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬৮ টাকার অনুমোদন দেওয়ায় মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২৫৪ কোটি ৯৩ লাখ ১২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা