জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে যে ৩০ লাখ শিশু জন্ম নেয় তাদের ২০ শতাংশ বা ৬ লাখ শিশুর জন্ম হয় অপরিণত অবস্থায়। আর এসব অপরিণত শিশুর ২০ থেকে ২২ শতাংশ অপরিণত শিশু অন্ধত্ব বা রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটির (আরওপি) ঝুঁকিতে থাকে।
তবে আশার কথা, বছরে লক্ষাধিক শিশুর অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকলেও সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করালে তারা রক্ষা পায়। কিন্তু এই চিকিৎসা নিয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং দেশের সর্বত্র এই রোগের চিকিৎসা সুযোগ না থাকায় পরিস্থিতি দিনে দিনে জটিল হয়ে পড়ছে। এ কারণে চিরতরে অন্ধ হচ্ছে অসংখ্য শিশু।
‘অপরিণত শিশুঅন্ধত্ব প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: সুযোগ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকরা বলছেন, আরওপি হলো চোখের রেটিনার এমন একটি অস্বাভাকিতা, যাতে কোনও শিশু আক্রান্ত হতে পারে ৩৪ সপ্তাহের আগে জন্মালে। আর তাতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য সময় থাকে মাত্র ৩০ দিন। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতেই হবে। না হলে কোনোভাবেই আক্রান্ত শিশুর অন্ধত্ব এড়ানো যাবে না।
কিন্তু সমস্যা অন্যত্রে। এই আরওপি সেবা বা চিকিৎসা দেশের বিভাগীয় ও বড় জেলা শহরগুলোর বাইরে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তার বড় কারণ অবকাঠামো এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অপ্রতুলতা। তাই এই সমস্যার সমাধান করা না গেলে দেশের লাখ লাখ শিশুর দৃষ্টিশক্তি হারানোর ভয় থেকেই যাবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের স্বাস্থ্যখাতে আরওপি নতুন এক ঝুঁকির নাম। এমনতেই দেশে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসারসহ ফুসফুসের নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বহু অংশে বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আরওপি নিয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই। এ জন্য নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা আশু প্রয়োজন। অন্তত জন্মের পর প্রতিটি শিশুর চোখের পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা মনে করি, শুধু অবকাঠামো আর চিকিৎসক দিয়েই আরওপি থেকে ঝুঁকিমুক্ত হওয়া যাবে না। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজটিই আগে করতে হবে। এর পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই রক্ষা পাবে লাখো শিশুর দৃষ্টিশক্তি।