ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শনিবার রাজধানীতে ছাত্রলীগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘স্কুলের ছেলে-মেয়েদের ওপর এমনিতেই বইয়ের বোঝা রয়েছে; আলাদা করে রাজনীতির বোঝা চাপানোর দরকার নেই। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি থাকবে, থাকতে হবে। …তাই বলে স্কুল পর্যায়ের কমিটি করার দরকার নেই।’ আমরা জানি গত ২২ নভেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে স্কুল পর্যায়ে কমিটি করার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশে ছাত্রলীগকে আরও গতিশীল ও বেগবান করার লক্ষ্যে সকল সাংগঠনিক ইউনিটের অন্তর্গত মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি গঠন করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ ছাত্রলীগের এমন সিদ্ধান্তের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক সমালোচনা তৈরি হয়। বিশেষ করে বর্তমান ছাত্ররাজনীতিকে স্কুলপর্যায়ে টেনে নেয়ার এ উদ্যোগে শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা নানাভাবে দাবি জানান, দলবাজি আর হানাহানির এই ছাত্ররাজনীতিতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে যুক্ত না করতে। দেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা মূলত লেখাপড়া, খেলাধুলার পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা করে থাকে। কিন্তু আর্থ-সামাজিক-কারণে সেই জায়গা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমান সময়ের প্রায় আদর্শহীন ছাত্ররাজনীতিতে তারা জড়িয়ে পড়লে তাদের ভবিষ্যত কী হবে? এত ছোট বয়সেই যদি তারা দলাদলি, গালিগালাজ আর দোষারোপের রাজনীতি শিখে ফেলে তাহলে আর অবশিষ্ট থাকবে কী? এই অবস্থায় আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত সঠিক। তবে এমন ঘোষণা শুধু আওয়ামী লীগ থেকেই নয়; অন্য দলগুলোর কাছ থেকেও আসুক। কেননা বিএনপি, জামায়াত ও কয়েকটি বামপন্থী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্কুল পর্যায়ের কমিটি রয়েছে। এসব দলও যদি একই রকম অবস্থান নেয়, তবেই স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমান ধারার ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমরাও চাই ছাত্ররা রাজনীতিতে আসুক, তবে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর। এখানে আমরা আরেকটি কথা বলতে চাই। আমরা দেখেছি স্কুল ক্যাবিনেট নির্বাচনের মাধ্যমে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারলেও দীর্ঘ ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচন নেই। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক সেটাও আমরা চাই।