এক অন্যরকম আবহে এবছর পালিত হয়েছে মহান মে দিবস। বিশ্বের কোথাও ছিল না বর্ণাঢ্য মিছিল, লাল পতাকা আর রঙিন ফেস্টুনের জমকালো শোভাযাত্রা। সারাবিশ্ব এখন ঘরবন্দি। করোনা ভাইরাস নামক এক ভয়াবহ রোগের প্রার্দুভাবে পৃথিবী যেনো থমকে আছে।
মাঠে-ঘাটে, কলকারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। সেদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে অন্তত ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসাবে পালন করতে শুরু করে।
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েট ইউনিয়ন গঠনের পর মে দিবসের তাৎপর্য আরও বেড়ে যায়। সোভিয়েটসহ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে শ্রমিকদের রাষ্ট্র কায়েম হওয়ার মধ্য দিয়ে শ্রমিকশ্রেণি পায় মর্যাদা। তারপরও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর আধিপত্য থাকায় দেশে দেশে শ্রমিক শোষণ বেড়েই চলে। সর্বশেষ কম মজুরির শ্রমে এখন সারা বিশ্বে অধিক মুনাফার জোয়ারে প্লাবিত বড় দেশগুলো। এখনও দিনমজুর, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমে ঘামে গড়ে ওঠে পুঁজির শানশওকত। এখনও শ্রমিক শ্রেণী তদের ন্যায্য পাওনা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত।
গত প্রায় ছয় মাস গোটা বিশ্বে লকডউনের কারণে শ্রমিকশ্রেণির দুর্গতি আরও বেড়েছে। হাজার হাজার শ্রমিকের বেকার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্ব মারাত্মক অর্থনৈতিক দুর্যোগে পড়তে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিকেরা। মহান মে দিবসের আত্মত্যাগের ইতিহাস যেনো ইতিহাস হয়েই পড়ে থাকবে। শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুরের জীবনমান সেই তিমিরেই রয়ে গেলো।
তারপরও মহান মে দিবস আসে। আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শ্রমিকের মর্যাদা ভিন্ন কোনো কল্যাণকর রাষ্ট্রের জন্ম হতে পারে না, হতে পারে না কোনো সভ্যরাষ্ট্র। আমরা এই করোনাকালে আরও বেশি করে বলতে চাই, শ্রমিকদের মর্যাদা ও তদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।