চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অন্যরকম এক সুখবর

গণমাধ্যমে প্রতিদিন দেশের যে খবরের ছড়াছড়ি আর সামাজিক মাধ্যমে যে তথ্যের প্রবাহ, সেসবের মধ্যে সুখবর খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। নানারকম অনিয়ম, অব্যবস্থা আর হানাহানির খবরে সুখবর যেনো এক সোনার হরিণ। এই যখন পরিস্থিতি, তখন দেশের চা খাত থেকে এসেছে সুখবর।

দেশের চা চাষের ইতিহাসে ২০২১ সালে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে, এর আগে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২০১৯ সালে। দেশের নিবন্ধিত ১৬৭টি চা-বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা-বাগানে গত বছর চা উৎপাদিত হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি। বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তির সূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সুখবর প্রকাশিত হয়েছে।

পাট, চা ও চামড়া রপ্তানিতে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু কয়েকযুগ হলো ওই ঐতিহ্য ক্রমেই নিম্নমুখী! ব্রিটিশ ভারতের বাংলাদেশ অংশে ১৮৫৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিক-ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয় সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে। সেই সময় থেকেই চায়ের রপ্তানি হতো। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩% চা উৎপাদন করে থাকে এবং এই চা খাতে ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে, যাদের প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী শ্রমিক।

চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় উৎপাদন যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনি রপ্তানিও কমানো হয়েছে অনেকখানি। কিন্তু এরপরও প্রতিবছর চাহিদার তুলনায় ১ থেকে ২ কোটি কেজি চায়ের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঘাটতিকে মাথায় রেখে সরকার ও চা খাতের সংশ্লিষ্টদের নতুন পরিকল্পনায় চা উৎপাদনে ইতিবাচক মাইলফলক তৈরি হচ্ছে।

এছাড়া পাহাড়ি এলাকায় এতো বছর চা চাষ হয়ে এলেও ২০০০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ কয়েকটি জেলায় ছোট ছোট বাগানে সেরা মানের চা চাষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সমতল জেলাগুলোতে চা চাষের ফলে উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখছে, যা খুবই ইতিবাচক। তবে চা শ্রমিকদের জীবন মান নিয়ে নানা নেতিবাচক তথ্য ও খবর মাঝে মাঝে সামনে চলে আসে। জানা যায়, মজুরি বৈষম্য আর কম মজুরির জন্য চা শ্রমিকদের প্রজন্মের ওই খাতে যুক্ত না হওয়ার কথাও। সেসব দিকে অবশ্যই নজর দেয়া প্রয়োজন।

আয়তনে ছোট দেশ হলেও বিরাট জনসংখ্যার কারণে ও নিজেদের প্রয়োজনে নতুন নতুন কর্মের উৎসে বের করায় বাংলাদেশের মানুষের সুনাম আছে। গার্মেন্টস, আইসিটিসহ নানা খাত নতুন করে যুক্ত হয়েছে রপ্তানি পণ্য ও সেবাখাতে, যা দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে অনন্য গতিতে। নতুন নতুন খাতের পাশাপাশি পাট, চা ও চামড়ার মতো রপ্তানি পণ্যের হারানো ঐতিহ্য ফেরানো গেলে দেশের সামর্থ্য আরো বেড়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।