চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অনুমোদনহীন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি!

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রার্দুভাবের পর থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি চিত্র উঠে এসেছে। দেখা গেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতটি সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ একটি খাত। অনিয়ম অযোগ্যতা দুর্নীতির চরম পরকাষ্ঠা দেখল দেশের মানুষ। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে হাজার হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ আর জীবন মরণ সমস্যার কারণ হয়ে দেখা দেয় দেশের সেবামূলক এই বিভাগের সার্বিক অব্যবস্থাপনা। মন্ত্রণালয়কে পড়তে হয়েছে তীব্র সমালোচনার মুখে। এর মাঝে উঠে আসে বিভিন্ন হাসপাতালের অবিশ্বাস্য অমানবিক উদাসীনতায় মৃত্যু হওয়া মানুষের করুণ কাহিনী। সম্প্রতি সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে একটি অনুমোদনহীন হাসপাতালের করোনা চিকিৎসা নিয়ে ভয়াবহ প্রতারণার বিষয়টি। গত ৬ জুলাই র‍্যাব অভিযান চালিয়ে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালটি সীলগালা করে দেয়। র‍্যাবের অভিযানে ওঠে আসে ভয়াবহ প্রতারণা আর মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অসংখ্য ঘটনা।

উত্তরা ১১নম্বর সেক্টরে একটি ভবনের চারটি ফ্লোর নিয়ে গড়ে তোলা ৫০ শয্যার ওই হাসপাতালের জন্য রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। এরপর ২০১৭ সালে তারা মিরপুরে হাসপাতালের একটি শাখা খুলে সরকারের অনুমোদন নেয়। কিন্তু লাইসেন্সের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর তা আর নবায়ন করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সরকার। গত ৬ জুলাই রিজেন্টের দুই হাসপাতাল বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়: অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ আরও অনিয়ম তারা করেছে। অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে রোগী ও স্বজনদের তরফ থেকে। এর মধ্যেই নমুনা পরীক্ষা না করে করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার ১৪টি অভিযোগ জমা পড়ে র‌্যাবের হাতে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিল ও প্যাড নকল করে সেসব রিপোর্ট তৈরি করা হলেও র‍্যাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওইসব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসব নমুনা পরীক্ষা করেনি বা রিপোর্টও দেয়নি। অভিযানে রিজেন্টের ৮ জন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়
হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল, কোভিড-১৯ রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য তারা কোনো টাকা নেবে না, সরকার ওই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু রোগীদের কাছ থেকে তারা লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে। আবার সেসব রোগীর চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের কাছেও বিল করেছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করত রিজেন্ট হাসপাতাল। এছাড়াও সরকার থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্ট প্রতি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার করে আদায় করত। এভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে মোট তিন কোটি টাকার হাতিয়েছে রিজেন্ট। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান নিজে করতেন অফিসে বসে। আমরা এর আগে দেখেছি জেকেজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই মহামারীকে পুঁজি করে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কেটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী আগে জানত না এই হাসপাতালটির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি? তারা জেনেও কেন এই ধরণের একটি হাসপাতালের সঙ্গে করোনা চিকিৎসার চুক্তি করে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন মনিটরিং ছাড়াই এইসব হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো সম্ভব কী না? আমরা আশা করি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মত মারাত্মক অপরাধের জন্য হাসপাতালের মালিক ও তার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদান করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষ জনগনের কাছে আস্থার পরিচয় দেবে। এই জঘন্য ইতরতুল্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে জনমনে ভরসা আনতে। নতুবা দেশের স্বাস্থ্যখাতের এই নগ্ন চেহারা সাধারণ মানুষকে আস্থাহীনতার শেষ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। যেখানে মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার কোন ভরসা শেষ পর্যন্ত আর থাকবে না। যার অভিঘাত রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।