চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘অনুতপ্ত’ রাঙ্গার বোধোদয়

স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর’ বলে যে মন্তব্য করেছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা; তীব্র প্রতিবাদ আর সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহার করে নেয়ার পাশাপাশি দুঃখ ও অনুতাপ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে সে জন্য ক্ষমা চাননি রাঙ্গা। শুধু দুঃখ প্রকাশ করেই নূর হোসেনের প্রতি করা এত বড় অন্যায়ের মাফ পেতে চেয়েছেন।

কৌশলী বাক্য ব্যবহার করে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো যে বিজ্ঞপ্তি মশিউর রহমান রাঙ্গা পাঠিয়েছেন তার মূল বক্তব্য হলো, ‘গত ১০ নভেম্বর গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা সভায় তার কিছু বক্তব্য নিয়ে কোনো কোনো মহল এবং বিশেষ করে নূর হোসেনের পরিবারের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মুখ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বেরিয়ে গেছে; যা নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত করেছে। এর জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।’

‘‘অতএব, অসতর্কভাবে বলে ফেলা আমার বক্তব্যে যে আঘাত লেগেছে, তার জন্য আমি নূর হোসেনের মায়ের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। একই সাথে আমার যে বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে; সেসব বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি আশা করি এই বিষয়ে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না।’’

রাঙ্গার বক্তব্যেই স্পষ্ট, তিনি আসলে নূর হোসেনকে শ্রদ্ধা করেন না। করলে গণতন্ত্র ফেরানোর অন্দোলনে এই শহীদের অবদান স্বীকার করে নিতেন। সেই আন্দোলন নিয়ে তার বিবৃতিতে একটি বাক্যও নেই। তার মানে পিঠ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রাঙ্গা দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে। আর তিনি সেই আন্দোলনকে স্বীকার করবেন-ই বা কেন? যে আন্দোলনের কারণে তার নেতা এরশাদকে লেজগুটিয়ে পালাতে হয়েছিল। সেই স্বৈরাচরের হাতে গড়া দলের মহাসচিব হয়ে তিনি নূর হোসেনকে শ্রদ্ধা করবেন; এমনটা আশা করা উচিৎ নয়।

আসলে রাঙ্গাদের মতো সুবিধাভোগী নেতাদের কাছে এদেশের জনগণ সেটা প্রত্যাশাও করে না। তবে একটা বিষয়, সেই স্বৈরাচারের পতিত দোসররা এই ঘটনায় জেনে গেছে; একজন শহীদ নূর হোসেন চলে গেলেও তার চেতনার বিনাশ হয়নি। বরং তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে আরো বিকশিত হয়েছে। তাই রাঙ্গারা যতোই চেষ্টা করুক; এদেশে স্বৈরাচারদের চরিত্র বদল করা যাবে না। এরশাদের দুঃশাসনকে ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না।

বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়া এরশাদকে কেউই ক্ষমা করবে না। এমনকি তাদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী আওয়ামী লীগও নূর হোসেনের বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাঙ্গাকে সীমা লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ও নূর হোসেনকে কটাক্ষ করলে জনগণ ক্ষমা করবে না। একবার মুখ ফসকে গেলে; যতই সরি বলুন কাজে আসবে না।’

আমরা জানি, এরশাদ নূর হোসেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে চিরতরে কফিনবন্দী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। জনগণকে দমিয়ে রাখা যায়নি। রাঙ্গাদের মতো নেতারা যতই চেষ্টা করুক না কেন; শহীদ নূর হোসেনকে অপমান-অসম্মান করতে পারবে না। কেননা তার প্রতি জাতির অতল শ্রদ্ধা আছে, ভালোবাসা আছে। তার মাঝেই অন্ততকাল বেঁচে থাকবেন শহীদ নূর হোসেন।