ব্রিটেনের মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হলেও এবারের নির্বাচনে ব্রিটেনের জনগণ দুই শতাধিক নারী এমপি নির্বাচিত করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। এই দুই শ’ একজন নারীর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ সিদ্দিক, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী ও রুপা হক রয়েছেন। আরো খুশির খবর হলো, তাদের প্রত্যেকেই ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন এবং এবার তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত ভোট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। স্বীকার করতে হবে যে, ব্রিটেনের মতো দেশে এভাবে ভোটারদের মন জয় করা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়। কেননা ক্ষমতাসীন দলের অর্থমন্ত্রীসহ বেশকিছু হেভিওয়েট প্রার্থীকে আমরা হেরে যেতে দেখেছি। আমাদের মেয়েরা তাদের কাজ ও যোগ্যতার মাধ্যমেই ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। জনগণের আস্থা ধরে রেখে এই অভূতপূর্ব বিজয়ে আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। এছাড়া এবার প্রথমবারের মতো কোন শিখ নারীকে নিজেদের এমপি হিসেবে পেয়েছে ব্রিটেন। লেবার পার্টির হয়ে প্রথমবারের মতো শিখ নারী প্রীত কাউর গিল বার্মিংহাম এজাবস্টন আসনে জয়লাভ করেন। রেকর্ড গড়া এই শিখ নারীসহ নির্বাচিত সব নারী এমপিকে অভিনন্দন জানাই। আমরা মনে করি, এই রেকর্ডসংখ্যক নারী নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রিটেন নিজেদেরকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কেননা নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন দেশ নিজেদের উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। এদিক থেকে বাংলাদেশ নারী প্রধানমন্ত্রীসহ নারী বিরোধীদলীয় নেতা ও নারী স্পিকার পেলেও সামগ্রিক বিবেচনায় পিছিয়ে রয়েছে বলে আমরা মনে করি। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশন থেকে তাগাদা থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো নারী নেতৃত্বের এই সংখ্যা এখনও পূরণ করতে পারেনি। তাদের অনীহার কারণে ৩০০ আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারী প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সুযোগ তেমন একটা ঘটে না। এছাড়া সংসদে সংরক্ষিত নারী সদস্যের জন্য ৫০টি আসন নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করলেও এলাকার উন্নয়নে তাদের ভূমিকা রাখার তেমন সুযোগ নেই। কারণ সাধারণ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিপরীতে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা সুযোগ-সুবিধা অনেক কম পান। এছাড়া পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ফলেও তারা অনেকাংশে বঞ্চিত। এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিতেও তাদের অবদান রাখার তেমন কোন সুযোগ নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে গণতন্ত্রের সূতিকাগার ব্রিটেন থেকে শিক্ষা নিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারসহ অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে আমরা উদাত্ত আহ্বান করছি।