জোহানেসবার্গ টেস্ট শুরুর আগেই বল টেম্পারিংকাণ্ডে চাপে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই চাপের ছায়া ম্যাচেও গ্রাস করল তাদের। সিরিজের শেষ ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার কাছে ৪৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে গেছে অজিরা। আর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা মরকেলকে জয় উপহার দিয়েছে তার সতীর্থরা। এছাড়া কোচ হিসেবে শেষটা হার দিয়েই হল ড্যারেন লেহম্যানের।
এই জয়ের ফলে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতল প্রোটিয়ারা। সেই সাথে ১৯৭০ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ জিতল সাউথ আফ্রিকা। আর ৪-০তে অ্যাশেজ জয়ের পর ৩-১ হার দিয়ে লজ্জার এক নজির গড়ল অস্ট্রেলিয়া।
প্রোটিয়াদের দেয়া ৬১২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থদিনই তিন উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ৩ উইকেটে ৮৮ রানে চতুর্থদিন শেষ করা অজিরা ম্যাচের পঞ্চমদিন দুপুরের বিরতি আগেই ৩১ রান যোগ করে অলআউট হয়ে যায়।
প্রতিপক্ষকে ১১৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে ১৯৩৪ সালের পর সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে সাউথ আফ্রিকা। এটা রানের হিসেবে প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বড় এবং টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ বড় জয়। সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়টা ইংল্যান্ডের। এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই ১৯২৮ সালে ৬৭৫ রানে জিতেছিল ইংলিশরা। পরের বড় দুটি জয় আবার অস্ট্রেলিয়ার। ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে।
দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন। জো বার্নস ৪২ ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব ২৪। এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা একটিও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ১৯৭০ সালের পর প্রথম এমন ঘটল। ১৯৭০ সিরিজেও ব্যাটসম্যানদের এমন দৈন্যদশায় সিরিজ হারে অস্ট্রেলিয়া।
এই হারে আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে অবনমন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তিন থেকে চারে নেমে গেছে অজিরা। একই দিনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ড্র করেছে নিউজিল্যান্ড। দুই ম্যাচের সিরিজ ১-০তে জিতে তিননম্বরে উঠে গেছে কিউইরা।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য আরো খারাপ হল, এই হারে গত দুই বছর বিদেশের মাটিতে জয়হীন সিরিজ শেষ করল তারা। এরমধ্য শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে হার। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ড্র। তাদের পরের টেস্ট অ্যাসাইনমেন্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে। যাদের বিপক্ষে আগের সাক্ষাতে নাকানি-চুবানি খেয়েছিল তারা। এবার স্মিথ-ওয়ার্নারকে ছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের আতঙ্ক আরো বাড়বে বলেই ধারণা।
এদিন একাই ৬ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙেছেন ভারনন ফিল্যান্ডার। ১৩ ওভারে ৫ মেডেনসহ ২১ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। এরমধ্য আবার প্রথম ৩২ বলে ৩ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। এর মধ্যে দ্বিতীয় উইকেটটি ছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০০তম। অজিদের শেষ উইকেট হিসেবে আউট হন নাথান লায়ন। সেটিও রান আউটের কাটায় পড়ে।
সাউথ আফ্রিকার অন্য বোলারদের মধ্য ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা পেসার মরনে মরকেল আগেরদিনের দুই উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। ৮৬ টেস্টে ৩০৯টি উইকেট নিয়ে সাদা পোশাক তুলে রাখলেন তিনি।
সাউথ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে করেছিল ৪৮৮ রান। জবাবে ২২১ রানে নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। ফলোঅন না করিয়ে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩৪৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে।
ম্যাচসেরার পুরষ্কার পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকে ধসিয়ে দেয়া ফিল্যান্ডার। আর সিরিজ সেরার ট্রফি উঠেছে কাগিসো রাবাদার হাতে।