তিনি এলেন, উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বললেন: আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে এসেছি।
যে মুজিব (শেখ মুজিবুর রহমান) বাঙালিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার লাল সুর্য, খুলে দিয়েছিলেন হাজার বছরের শৃঙ্খল। তাকে ধরে রাখা যায়নি। একদল হায়েনার কালো থাবা আর স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত্রের কাছে জাতি হারিয়েছিলো তার শ্রেষ্ট সন্তানকে। দু’চোখ বেয়ে পানি নেমে এলেও চিৎকার করে কাঁদতে পারেনি সেদিন বাঙালি। জান্তার অস্ত্রের চোখ রাঙানিতে দাবিয়ে রাখা হয়েছিলো পুরো জাতিকে।
১৯৮১ সালের ১৭ মে যেনো সেই অনেক না পারার বেদনাই ভর করেছিলো বিস্তৃর্ণ আকাশ জুড়ে। এমনভাবেই সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন সেই সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ করতে তৎকালীন ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও উপস্থিত জনগণ।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ননা করতে গিয়ে তিনি বলেন: অপরাহ্ন বেলায় কালো মেঘ এবং ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল বটতলা থেকে ছয়টি বাস রিজার্ভ করে নেত্রীকে আনতে গিয়েছিলাম। নেত্রীর বিকাল চারটায় আসার কথা ছিলো। আমরা বেলা এগারোটার দিকে গিয়ে দেখি রাস্তার চার ধারে অগণিত মানুষ আর মানুষ। বাধ্য হয়ে আমরা অনেক দূরে বাস রেখে হেঁটে বিমানবন্দরে যাই। পাঁচ তলা থেকে বটতলা সর্বস্তরের মানুষ যেনো রাস্তায় নেমে এসেছে।
‘নেত্রী যখন বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে এলেন, আমরাও বেরিয়ে আসলাম। কোথাকার বাস-কোথাকার কী? মানুষের ভীড়ে যেনো সব হারিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আমরা হাঁটা শুরু করলাম। আমরা প্রায় ১০ হাজার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কুর্মিটোলা থেকে হেঁটে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলাম। অন্তত কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিলো জাতির পিতার কন্যাকে দেখতে।’
এ ব্যাপারে কথা বলেন কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কৃষিবিদ ড.মির্জা এম এ জলিল। তিনি বলেন: শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে সর্বস্তরের বাঙালি তার দেশে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আবওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ এবং কোরবান আলী।
তার ঢাকা আসাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ তথা দেশবাসীর মধ্যে স্বঃতস্ফূর্ততা সৃষ্টি হয়েছিলো। শুধু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীই নয় সাধারণ মানুষ এদিন রাস্তায় নেমে আসে। বিকাল চারটার দিকে শেখ হাসিনার বহনকারী বাংলাদেশেরম মাটিতে অবতরণ করে। এরপর সেখানে থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে। সেখানেও জাতির পিতার উত্তরসূরিকে দেখতে ভিড়করে অগণিত মানুষ।
আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাইরে এসেছিলেন সাধারণ মানুষও। যেমনটা আবু রায়হান। তিনি তার অনুভূতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন: আমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলাম। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ট্রেন যোগে আমি আর আমার তিন বন্ধু এসেছিলাম শেখ হাসিনা দেখতে। শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন জান্তারা হত্যা করে মাকে কাঁদতে দেখেছিলাম। এর বাইরে তেমন কোনো স্মৃতি মনে নেই।
তাই যখন শুনলাম বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে আসছেন, আমিও তাকে দেখতে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।