করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর টানা ছুটির মেয়াদ একদিন আগে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়ানোর খবর জেনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নানান প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তাদের মূল কথা, ‘যতদ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হোক। কেননা অন্য সব কিছুই তো খোলা রয়েছে। তাহলে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে কেন?’ অভিভাবকদের একটা বড় অংশ এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থা নিয়েছেন। এমন কি সে জন্য তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত!
স্কুল খোলা এবং স্থগিত থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে বেশির ভাগ অভিভাবকের যখন এমন মনোভাব, তখন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীদের সুস্থ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে আজ রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এক বছর পরীক্ষা না দিলে জীবনে এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না। আগে সুস্থ থাকতে হবে।’
পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কেউ পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্ত হবে না, ভুল পথে যাবে না। পরীক্ষা নিতে পারবো কি না? না নিলে বিকল্প ব্যবস্থা কি হবে? সবকিছু নিয়েই চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, যাতে পরীক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমরা জানি, করোনোভাইরাসের এই মহামারীতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরীক্ষাই বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দেশেও গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। এরই মধ্যে সীমান্ত জেলাগুলোসহ দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটিও বারবার সতর্ক করে বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এমন অবস্থায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কোনো ঝুঁকি নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। কেননা এখানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সঙ্গে করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে অন্যদের সংক্রমিত করার বিরাট সুযোগও তৈরি হয়। এতে করে তারা যতটা না নিজেরা সংক্রমিত হবে; তার চেয়েও বেশি সংক্রমিত করবে অন্যদেরকে। মূল সমস্যাটা এখানেই। প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাসা বা বাড়িতেই বয়স্ক সদস্য আছেন। তাই শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের কথাও চিন্তা করা জরুরি।
এটা ঠিক এত বড় একটা সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে নানান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের। অনেক শিক্ষার্থী স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আবার অনেকেই অনলাইন শিক্ষাক্রম চালিয়ে যেতে বেশি করে ইন্টারনেট আসক্ত হচ্ছে। তাদের দিনের বড় একটা সময় কাটছে অনলাইনে গেমস খেলে। এসব কাছ থেকে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হবেন; এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু অনেক কিছুই আবেগের মাপকাঠিতে চলে না। বিশেষ করে বৃহত্তর স্বার্থ বলে একটা বিষয় আছে। এমন আবেগের বশবর্তী এরমধ্যে কয়েকটি দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছিল। কিন্তু জীবনের শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত আবার তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এই শঙ্কার কথাটাই বলতে চেয়েছেন, বেঁচে থাকলে পরীক্ষা অনেকবার দেওয়া যাবে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কোনো শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন হলে সে দায় মন্ত্রী বা সরকারের ওপরই বর্তাবে।
আমরা মনে করি, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে, বিকল্প উপায়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে। কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। কেনান শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আজকের শিক্ষার্থীই দেশের ভবিষ্যত।