চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

রাহানের ভারত যেন ‘৩৬’র ছাই থেকে জেগে ওঠা ফিনিক্স

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২-১এ টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত

আজিঙ্কা রাহানের ভারত যেন নতুন করে লিখল গ্রিক উপকথার সেই ফিনিক্স পাখির গল্পটি। আগুনে ভস্মীভূত হয়েও ছাই থেকে ফের বেঁচে ওঠা ফিনিক্স পাখির গল্প। হরেক বিতর্ক আর প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে সিরিজ জিতে ফেরা, ঐতিহাসিক এক আখ্যানই লিখল কোহলিহীন ভারত।

আখ্যানের শেষটা ব্রিসবেনে লিখেছে ভারত। সিরিজের চতুর্থ তথা শেষ টেস্টে ৩২৮ রান তাড়া করে তুলে নিয়েছে ৩ উইকেটের জয়। তাতে ২-১ ব্যবধানে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি উঁচিয়ে ধরল সফরকারীরা।

Bkash July

সফরের শুরুটা হয়েছিল রোহিত শর্মা কেনো দলে নেই, সঙ্গে বিতর্ক বাড়িয়েছিল যখন বিসিসিআই খোলাসা করছিল না ঠিক কী কারণে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও সহ-অধিনায়ক খেলতে পারবেন না। বিতর্কে ঘি ঢেলেছিল অনাগত সন্তানের আগমনের সময় স্ত্রী আনুশকা শর্মার পাশে থাকতে বিরাট কোহলির ছুটি মঞ্জুর হওয়ার খবর।

সেসব বিতর্ক মাথায় নিয়ে অ্যাডিলেডে নেমেছিল ভারত। নেমে স্রেফ গুঁড়িয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। প্রথম ইনিংসে তাও আড়াইশর কাছে যেতে পেরেছিল সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ৩৬ রানে। ম্যাচ হেরে বসে ৮ উইকেটে।

Reneta June

দল যখন বিধ্বস্ত, কোহলির ছুটি বাতিল হয়নি। সতীর্থদের সেই ভাঙাচোরা মনোবলের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেই দেশে উড়াল দেন নিয়মিত অধিনায়ক। আপদকালীন অধিনায়কের দায়িত্ব বর্তায় রাহানের কাঁধে। এরপর শুধু মহাকাব্য লেখার পালা।

সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মেলবোর্নে বোলারদের দাপটের পাশে খোদ অধিনায়কের ১১২ রানের এক ইনিংস। ঠিক ৮ উইকেটের জয়েই সিরিজে সমতা ফেরান রাহানেরা। সিডনিতে তৃতীয় টেস্টে ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে দারুণ এক ড্র তুলে ব্রিসবেনে আসে ভারত।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটের অন্তর্নিহিত রংয়ের সবটুকুর পসরা খুলে বসে ব্রিসবেন। সেশনে-সেশনে ম্যাচের পট পরিবর্তন হয়েছে। পঞ্চম, তথা শেষদিনে ফল আনতে ম্যাচের শেষ আধাঘণ্টা পর্যন্ত লড়াই জমে ছিল। এরপরই উল্লাসে মাতে ভারত।

চতুর্থ দিনেই ঠিক হয়ে যায় সব রোমাঞ্চ তোলা থাকছে শেষদিনের জন্য। সোমবার শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট করে দিয়ে ব্যাটে নেমেছিল ভারত। বিরূপ আবহাওয়া খেলা থামিয়ে রাখে অনেকক্ষণ। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১ বল খেলতেই দিনের লড়াইয়ে শেষ টানেন আম্পায়াররা।

শেষ টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ভারতের সামনে ৩২৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল অজিরা। আগেরদিন ৪ রান তুলে রাত্রিযাপনে যায় সফরকারীরা। মঙ্গলবার অপরাজিত দুই ওপেনার শুভম গিল ও রোহিত শর্মা ক্রিজে আসেন। রোহিত আগেরদিনের ৪-এর সাথে আর ৩ রান যোগ করে কামিন্সের বলে উইকেটের পেছনে পেইনের গ্লাভসে ধরা পড়লে শুরুতেই ধাক্কা।

সেটি সামলে নেন গিল ও চেতেশ্বর পূজারা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে প্রথম সেঞ্চুরির হাতছানি পাওয়া ২১ বছর বয়সী ডানহাতি গিল ৯১ রানে সাজঘরে ফিরেছেন হতাশা নিয়ে। ৮ চার ও ২ ছয়ের ইনিংসটি ১৪৬ বলে সাজানো। থামে লায়নের বলে স্মিথের ক্যাচ হয়ে।

যাওয়ার আগে পূজারার সঙ্গে ১১৪ রানের জুটি দিয়ে জয়ের ভিত গেড়ে দিয়ে যান গিল। পূজারা এগিয়েছেন শামুক গতিতে। রাহানে ২২ বলে ২৪ রানে ফিরে গেলে তিনি আরও খোলসে ঢুকে যান। শেষপর্যন্ত ২১১ বলে ৫৬ করে ফিরেছেন কামিন্সের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে।

খানিক পর ফিরে যান আগারওয়ালও, ৯ রানে। প্রথম ইনিংসের হিরো ওয়াশিংটনকে নিয়ে একপ্রান্ত আগলে তখন ম্যাচ পকেটে নিতে লড়াই চালিয়ে যান রিশভ পান্ট। দুজনে ৫২ রান যোগ করেন।

ওয়াশিংটন এদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি। থেমেছেন ২২ করে। খানিক পর প্রথম ইনিংসের আরেক নায়ক শার্দূল ঠাকুর ২ রানে সাজঘরে হাঁটা দিলে বিপদের আভাস মেলে।

পান্ট সেই বিপদ বড় হতে দেননি। একপ্রান্ত আগলে ম্যাচ শেষ করেই মাঠ ছেড়েছেন ধোনির বিকল্প উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ভারত যখন জয়ে নোঙর ফেলল, পান্টের নামের পাশে তখন ৮৯, অপরাজিত ইনিংসটি সময়ের দাবি মিটিয়ে ৯ চার ও এক ছয়ে ১৩৮ বলে খেলা।

ভারত ৩.৩৯ রানরেটে তাড়া করে ৯৭ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৯ করে ফেলে।

শুধু এটুকু লিখলে পুরো টেস্টের চিত্রের সামান্যও বোঝা সম্ভব নয়! জিততে শেষদিনে ভারতের দরকার ছিল ৩২৪ রান, বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১০ উইকেট। ম্যাচ যে এই পরিস্থিতিতে গেল, সেটির কৃতিত্ব ওয়াশিংটন ও শার্দূলের।

প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা অলআউট হয়েছিল ৩৬৯ রানে। জবাব দিতে নেমে লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের প্রতিরোধে অলআউট হওয়ার আগে প্রথম ইনিংসে ৩৩৬ রান তোলে ভারত।

প্রথম ইনিংস থেকে ৩৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে অজিরা। রোববার দিনের শেষ ঘণ্টায় নেমে লিড বাড়িয়ে ৫৪ করে। দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২১ রানে চতুর্থ দিন শুরু করে তারা অলআউট হয়েছে ২৯৪ রানে।

অজিদের রানের লাগাম টেনে ধরতে সেরাটা দিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ, ২৬ বছর বয়সী ডানহাতি মিডিয়াম পেসার তৃতীয় টেস্টে নেমে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ১৯.৫ ওভার বল করে ৭৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। প্রথমবার পাঁচ উইকেট শিকার তার।

আরেক মিডিয়াম পেসার শার্দূল ঠাকুরও ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন। ২৯ বছর বয়সী ডানহাতি মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে ১৯ ওভারে ৬১ রানে ৪ উইকেট নামের পাশে জমিয়েছেন। অন্য উইকেটটি অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের।

চতুর্থ দিনে ১৮৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়ে গেলে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের দীর্ঘ বিষাদে ডুবিয়েছিলেন এই শার্দূল ঠাকুর ও ওয়াশিংটন সুন্দরই। ভারতের সপ্তম উইকেট জুটিতে দুজনে শতরান পেরনো অবদান রাখেন।

স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা মুছে দেন শার্দূল ও ওয়াশিংটন। দুজনে সপ্তম উইকেটে ১২৩ রান যোগ করেন, একত্রে ব্যাট করে যান ৩৬ ওভার। প্যাট কামিন্সের বলে ৬৭ করে শার্দূলের বিদায়ে ভাঙে জুটি। টেস্ট প্রথম ফিফটি তার। অন্যদিকে অভিষিক্ত ওয়াশিংটনের অবদান ছিল ৬২। ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি অফব্রেক বোলারেরও যেটি প্রথম ফিফটি।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View