মধ্যপ্রাচ্যে জিইয়ে রাখা যুদ্ধে শরণার্থী হয়ে ইউরোপের সাগর পাড়ে অসহায় মানবতার মুখ থুবড়ে পড়ার প্রতীকে পরিণত হয়েছে ছোট্ট শিশু আয়লানের নিথর দেহের ছবি। যুদ্ধ-সংঘাতে বিপন্ন মানবতাকে সতর্ক বার্তা দিচ্ছে নিষ্প্রাণ আয়লানের লাল টি-শার্ট। বিশ্বগণমাধ্যমে প্রকাশিত আয়লানের ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় শোক, নিন্দায় সরব বিশ্ব। শোক, ক্ষোভের পাশাপাশি অভিবাসী সংকট সমাধানে বিশ্বমোড়লদের নিষ্পৃহ ভূমিকায় ধিক্কার জানানো হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষের পাশে না দাঁড়ানোয় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতের মতো বিত্তশালী আরব রাষ্ট্রগুলো।
আয়লানের ছবিটির ওপর ভিত্তি করে শতশত প্রতিবাদী চিত্রকর্ম হয়েছে। একটি চিত্রে আয়লানের করুণ পরিণতির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের বিত্তশালী দেশগুলোর অমানবিক আচরণকে দায়ী করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, শরণার্থীরা সেসব দেশে আশ্রয় না পেয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে।
আরেকটি চিত্রকর্মে আয়লানকে ছোট্ট দেবদূত হিসেবে দেখানো হয় যে দেবদূত মানুষের নির্মমতার পরও ফুল দিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
আয়লানের করুণ পরিণতিতে অভিবাসীদের বিষয়ে ইউরোপের অবস্থানের সমালোচনা করা হচ্ছে বিশ্বগণমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছে সিরিয়ার এই ছোট্ট শিশুর মুখ থুবড়ে পড়ার শক্তিশালী ছবিতেও যদি ইউরোপের মানবতা না জাগে, তবে কিসে জাগবে!
আয়লানের নিথর দেহের ছবিটি দিয়ে ডেইলি মিরর শিরোনাম করেছে ‘আনবিয়ারেবল’ বা ‘অপূরণীয়’। ‘ডেভিড কিছু একটা করুন’ শিরোনামে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রতি অভিবাসীদের প্রতি সদয় হওয়ার সরাসরি আহ্বান জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপপরিচালক নাদিম হোরি আয়লানের ছবিটিকে ‘গা ছমছমে’ বলে অভিহিত করে এই হৃদয় বিদারক পরিস্থিতিকে সম্মিলিত পরাজয় বলে মন্তব্য করেছেন।
বুরহান আকমান নামে তুরস্কের এক নাগরিক বিশ্বের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে লিখেছেন ‘ মানুষ দেখছি অথচ মানবতা দেখছি না’।
আইএস থেকে বাঁচতে গিয়ে আয়লানের মৃত্যু
শিশু আয়লানের পুরো নাম আয়লান কুর্দি। সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত কোবানি শহরে ছিলো তাদের বাড়ি। যুদ্ধে বিপর্যস্ত সিরীয় শহরটি দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা। পাইকারি হারে হত্যা করা শুরু করে কুর্দিদের।
এই পরিস্থিতি থেকে দূরে ইউরোপের কোনো দেশে শান্তির খোঁজে তিন বছরের শিশু সন্তান আয়লান ও পাঁচ বছরের গালিপ এবং স্ত্রী রেহানকে নিয়ে নৌকায় করে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলেন তার পিতা আব্দুল্লাহ।
তুরস্কের সমুদ্র তীরের কাছাকাছি এসে ডুবে যায় নৌকাটি। তারপর সব শেষ। আব্দুল্লাহ নিজে উদ্ধার পেলেও ততোক্ষণে চিরশান্তির দেশে চলে গেছে তার দুই শিশুপুত্র আর স্ত্রী।
তবে ডুবে যাওয়া আয়লান ও গালিপের দেহ ফেরত দেয় সাগর। তুরস্কের বোদরাম সৈকতে ভেসে আসে আয়লানের দেহ। লাল-টি শার্টি, নীল হাফ প্যান্ট আর জুতাজোড়া তখনও তার পায়ে। উল্টো হয়ে থাকা দেহটির ছবি প্রকাশিত হয় তুরস্কের গণমাধ্যমে। বিশ্বগণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় গুরুত্বের সাথে। তোলপাড় শুরু হয় বিশ্বজুড়ে।