এবার ডেঙ্গু মশা আমাদের অবস্থা কাহিল করে ফেলবে-কথাটা বলছিলেন বইমেলায় একজন চিকিৎসক। তার কথার সূত্র ধরেই পাশে আরেকজন বলছিলেন, ঢাকা শহরে যেভাবে মশার উপদ্রব বেড়েছে, কই সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতা তো তেমনভাবে চোখে পড়ছে না।
কথাগুলো খুবই যুক্তিসঙ্গত। যুক্তিসঙ্গত পাশাপাশি আমাদের স্বভাবটাই যেন এ রকম- কোনো সংকট তৈরি হবার পরই আমাদের টনক নড়ে। আগেভাগে আমাদের তৎপরতা থাকে না।
গত বছর যেমন ডেঙ্গু আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। হাসপাতালে ঠাঁই মিলছিল না ডেঙ্গু রোগীদের। পাশাপাশি ডেঙ্গু হয়েছে কিনা পরীক্ষা করার জন্যে যেসব উপকরণ প্রয়োজন সেগুলোর ঘাটতিও দেখা দিয়েছিল।
আসলে আমাদের অনেকগুলো বিষয় হয়ে গেছে লোকদেখানো। পূর্বপ্রস্তুতির কোনো ব্যবস্থা নেই। সঙ্কট আসবেই দুর্যোগ আসবেই, তা ঠেকানোর মত প্রস্তুতি থাকলে কোনো সমস্যা হবার কথা না। কিন্তু সেখানেই আমাদের যত অবহেলা।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নব-নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টিকারী এডিস মশা নির্মূলে আগাম কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণের নব-নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বেশ মজা করেই বলেছেন-‘মশা আপনার ভোট যেন না খেয়ে ফেলে, সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে দেখতে হবে। মশা অনেক ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী। এটা মাথায় রাখতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে ডেঙ্গুকে একটি প্রধান সমস্যা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।

আমাদের সিটি করপোরেশনের এখনই উচিত প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে মশার ওষুধ ছিটানো। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। বর্ষা মৌসুম আসতে এখনও দু’তিন মাস বাকি-পরে নিলেও চলবে- এরকমটা ভাবলে পরে সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও উদ্যোগ নিয়ে রাখা উচিত প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রীর ব্যবস্থা রাখা। চিকিৎসকদেরও এখনই আগাম চিন্তাভাবনা করে রাখা। যাতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে কিভাবে মানুষকে সহায়তা করা যায় সে ব্যাপারে নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলে রাখা।
কারণ গতবার যতটা না ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভিড় করেছিল তার চেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন অনেক ঠাণ্ডা কাশি বা সামান্য জ্বরে আক্রান্ত মানুষ। ডেঙ্গু হলে প্রাথমিকভাবে কি কি পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেগুলো সাধারণ মানুষের জন্য সহজ করে বোঝানোর ব্যবস্থা করা এখনই দরকার।
ডেঙ্গু যেন মহামারী আকার ধারণ করতে না পারে সে জন্যে সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। প্রতিটি এলাকায় ময়লা ভাগাড়গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিচ্ছন্নকর্মীদের এখন থেকেই তৎপর হতে হবে। বাড়ির আশেপাশের ড্রেনগুলো গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমার পর থেকে এখন পর্যন্ত আদৌ পরিষ্কার করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে খোঁজ করতে হবে।
আমরা দেখতে চাই না হাসপাতালের কড়িডোরগুলোতে গতবারের মতো এবারও ডেঙ্গু রোগীদের অসহায় মুখ। এখনই ব্যবস্থা নিন নব-নির্বাচিত মেয়র আর কাউন্সিলরগণ। প্রধানমন্ত্রীর কথার রেশ ধরেই বলা প্রয়োজন আপনাদের ভোট যেন মশা না খেয়ে ফেলে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)