ভ্যাট বাড়ানোর কারণে এ বছর ঈদের বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, ঈদকেন্দ্রিক বাজারে পোশাক বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা পূর্ণ হয়নি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে।
ফ্যাশন হাউজের মালিকেরা মনে করেন, অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে মানুষ দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাক কেনা থেকে বিমুখ হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শুক্রবার রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির ফ্যাশন হাউজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে ক্রেতাদের নানামুখি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন পোশাক বিক্রেতারা। ভ্যাট নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডাও হয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে।
বসুন্ধরা সিটির জেন্টল পার্কের আউটলেটের ক্যাশিয়ার নাজমুল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ঈদের অল্প কয়দিন আগে হঠাৎ ভ্যাট বাড়িয়ে দেয়ার কারণে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের পোশাকের দামের সাথে ভ্যাট যোগ করা হয়। এতদিন ৪ শতাংশ ছিল। কিন্তু এখন ৫ শতাংশ হিসেব করলে ক্রেতাদের সাথে বাকবিতণ্ডা করতে হয়। কোনো কোনো ক্রেতা রেগে চলেও যায়।
তবে গতবছরের তুলনায় এবার বিক্রি তো বাড়েনি বরং শেষ পর্যন্ত কমতে পারে বলে জানান নাজমুল।
একই মার্কেটে সেইলরের আউটলেটে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মানিক বলেন, ভ্যাট নিয়ে প্রতিদিন ক্রেতাদের সাথে দর কষাকষি করা লাগে। অনেকে বাড়তি ১ শতাংশ ভ্যাট দিতে চায় না।
তবে যেসব ব্র্যান্ডের পোশাকে দামের সাথে আগে থেকেই ভ্যাট যোগ করা রয়েছে তারা বেশি সমস্যায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্মার্টেক্স আউটলেটের ক্যাশিয়ার সাইফুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আগে থেকেই স্মার্টেক্সের পোশাকের মূল দামের সাথে ৪ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করে পণ্যের গায়ে দাম লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাজেটের পর এখন বাড়তি ১ শতাংশ ভ্যাট চাইলে ক্রেতাদের সাথে তর্ক করা লাগে। তাই এখন ১ শতাংশ ভ্যাট কম নিয়েই পোশাক বিক্রি করতে হচ্ছে।
ভ্যাট বাড়ানোর খবর জানে না অনেক ক্রেতাও। রাজধানীর নাখাল পাড়া থেকে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে আসা নাসরিন আক্তার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বর্তমানে প্রায় সব জিনিসেরই দাম বাড়তি। এখন ভ্যাট বসানোর কারণে পোশাকেরও দাম বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, সরকার ভ্যাট বাড়ালে ব্যবসায়ীদের তো ক্ষতি হবে না। কারণ ওই ভ্যাট ক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হয়।
“তবে পোশাক-আশাকে ভ্যাট বাড়ানো ঠিক হয়নি বলে আমি মনে করি।”
এ বিষয়ে দেশীয় পোশাকশিল্পের সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফইএবি) সভাপতি আজহারুল হক আজাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ঈদে সাধারণত ৪ হাজার কোটি টাকার ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি হয়। কিন্ত এবার বিক্রির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ সাধারণ লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ বিক্রি হতে পারে।
তিনি বলেন, ভ্যাট বাড়ানোর কারণে কিছুটা দাম বেড়েছে পোশাকের। ফলে বিক্রি কমছে। তবে এর ফলে ক্রেতারা দেশীয় ব্র্যান্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ কাছাকাছি দামে কেউ বিদেশি জামা পেলে দেশেরটা কিনবে না।
সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি শাহীন আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাড়তি ভ্যাট বিষয়ে ক্রেতাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বাড়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
গত ৭ জুন প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নিজস্ব ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক বিপণন ও নিজস্ব ব্র্যান্ড ব্যতীত তৈরি পোশাক বিপণনে ভ্যাট ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সাধারণত নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে ভ্যাট কার্যকরের নিয়ম থাকলেও বাজেটের দিনেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এসআরও নং ১৭৩/আইন/২০১৮/৭৯৮ মূসক নামে একটি চিঠি দিয়ে উদ্যোক্তাদের নতুন ভ্যাট কার্যকর করার নির্দেশ দেয়।